চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের বর্তমান সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত বেড়ে চলা স্মজনপ্রীতি এবং গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ হাসপাতালের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। হাসপাতালটি পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি যে নিয়মাবলী প্রণয়ন করেছেন, সেগুলো তিনি নিজেই লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি বা নেতৃস্থানীয় সদস্যের আত্মীয়-স্বজন হাসপাতালের কোনো পদে চাকরি করতে পারবে না। তবে তিনি এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে তার পরিবারের অন্তত ৪৬ জন সদস্যকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এতে বোঝা যায়, হাসপাতালটি কার্যত একটি পারিবারিক সিন্ডিকেটের অংশে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তিনি অসংখ্য আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়েছেন, যার ফলে হাসপাতালের নীতিগত প্রভাব ও পরিচালনা তার পরিবারের হাতে চলে গেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর আত্মীয়রা রয়েছেন। তার ভাতিজা মো. আমান উল্লাহ আমান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার পদে কর্মরত, আউটডোর অফিসার হিসেবে আছেন মো. ইয়াছিন, অ্যাকাউন্ট অফিসার হিসেবে মো. আলেয়ার এবং মো. নাসিমুল গনি রয়েছেন। এছাড়া, ফারিয়া বিনতে আলী সিনিয়র মেডিকেল অফিসার পদে এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্টের শালিকা শেহরীন সামিহ ইসলাম ফার্মাসিস্ট পদে রয়েছেন। এমনকি এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য শহীদুল্লাহর শ্যালক ইনডোর সুপারভাইজার পদে রয়েছেন।
এছাড়াও জাহাঙ্গীর চৌধুরী এমন একটি নিয়ম তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি কেবল নিজের আত্মীয়দেরই সুবিধা দিয়েছেন এবং পরবর্তীতে এই ধরনের প্রভাব যেন অন্য কেউ না নিতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে গঠনতন্ত্রে সংশোধন করেছেন। তার এই দ্বৈত নীতি ও নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য গঠনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে সাধারণ সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের অন্যান্য সদস্য ও সাধারণ জনগণের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে।
এ বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো দৈনিক ভোরের আওয়াজ, দৈনিক সকালের সময়, দৈনিক শাহ আমানত, এবং ইংরেজি পত্রিকা The Daily Banner। এসব প্রতিবেদনগুলোতে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর স্মজনপ্রীতি, নিয়োগে অনিয়ম এবং গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
হাসপাতালটি শুধুমাত্র সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও, পারিবারিক স্বার্থে পরিচালিত হওয়া এটি রোগী ও জীবন সদস্যদের প্রতি একধরনের বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। জাহাঙ্গীর চৌধুরীর এই অবৈধ কর্মকাণ্ডগুলোর প্রতি তদন্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হাসপাতালের গঠনতন্ত্র মেনে পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা জরুরি। এখন সময় এসেছে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের মতো একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পারিবারিক প্রভাবের হাত থেকে মুক্ত করার। জীবন সদস্যরা আশাবাদী যে, এই অনিয়মের অবসান হবে এবং হাসপাতালটি তার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পথে ফিরে আসবে।