চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিএনপির উদ্যোগে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা দাবির লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা দাবি জনগণের মাঝে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ১২ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় হাটহাজারী বাস স্টেশন মোড়ে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। প্রধান অতিথির বক্তব্য: বক্তব্যে মীর হেলাল বলেন, “বিএনপি’র ৩১ দফা আধুনিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে এবং একটি সুশাসিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পাবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়ন কাঠামো ধ্বংস করেছে, জনগণের অধিকার হরণ করেছে। তবে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ পুনর্গঠনে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “হাসিনা সরকার জনগণের আস্থা হারিয়ে এখন দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সংখ্যালঘু এবং সাম্প্রদায়িকতাকে হাতিয়ার বানিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা চলছে। দেশের ছাত্র-জনতা এবং সর্বস্তরের মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। আমরা জনগণের সমর্থনে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে আনব।”
সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা:
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য এবং হাটহাজারী পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন। সঞ্চালনা করেন হাটহাজারী পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব অহিদুল আলম অহিদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য:
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন: আলহাজ্ব নূর মোহাম্মদ, যুগ্ম-আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি এবং হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক।
গিয়াস উদ্দিন চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব, হাটহাজারী উপজেলা বিএনপি। ডা. রফিকুল আলম চৌধুরী, যুগ্ম-আহ্বায়ক, হাটহাজারী উপজেলা বিএনপি। এম এ শুক্কুর মেম্বার, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক, হাটহাজারী পৌরসভা বিএনপি। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ: অনুষ্ঠানে হাটহাজারী পৌরসভা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাবিব। ২নং ওয়ার্ড সভাপতি জসিম উদ্দিন। ৪নং ওয়ার্ড সভাপতি আমিন সওদাগর। ৬নং ওয়ার্ড সভাপতি দিল মোহাম্মদ। ৭নং ওয়ার্ড সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন।
৮নং ওয়ার্ড সভাপতি কামাল চৌধুরী। ৯নং ওয়ার্ড সভাপতি ইয়াকুব চৌধুরী।
অঙ্গসংগঠনের ভূমিকা:
অনুষ্ঠানে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল এবং ছাত্রদলের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন:
মনিরুল আলম জনি, সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদল। শাখাওয়াত শিমুল, যুগ্ম-সম্পাদক, যুবদল। তকিবুল হাসান চৌধুরী তকি, আহ্বায়ক, হাটহাজারী উপজেলা ছাত্রদল। নুরুল কবির তালুকদার, সদস্য সচিব, উপজেলা যুবদল।
ইলিয়াস মেহেদী, সভাপতি, পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক দল। সভায় নেতৃবৃন্দ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, দেশের উন্নয়ন স্থবির হয়ে আছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিএনপির ৩১ দফা দাবি বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। সভা শেষে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ জনগণের মাঝে ৩১ দফা দাবিসংবলিত লিফলেট বিতরণ করেন। নেতাকর্মীরা জনগণকে এই রূপরেখা সম্পর্কে সচেতন করার আহ্বান জানান।
প্রতিবেদকের মতামত:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। দলটি যে “রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা” ঘোষণা করেছে, তা নিঃসন্দেহে একটি সুসংগঠিত ও দূরদর্শী পরিকল্পনা। এই কর্মসূচি শুধু ক্ষমতায় আসার প্রতিশ্রুতি নয়, বরং একটি সুশাসিত, গণতান্ত্রিক এবং আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বাস্তবমুখী রূপরেখা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই পরিকল্পনা প্রমাণ করে যে, দলটি বর্তমান সংকটের গভীরতা অনুধাবন করেছে এবং সেখান থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। তারেক রহমান একজন প্রজন্মদর্শী নেতা, যার নেতৃত্বে এই দল নতুনভাবে সংগঠিত হতে পারছে। তার ৩১ দফা দাবি দেশের প্রতিটি স্তরের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করছে। ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলালের মতো তরুণ, মেধাবী ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ নেতার বক্তব্যে দলটির লক্ষ্য ও পরিকল্পনার গভীরতা স্পষ্ট। তার ভাষণে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে একত্রিত করার যে বার্তা উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। তিনি যে ভাষায় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছেন এবং তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন, তা বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র, যুব এবং সাধারণ জনগণের জেগে ওঠা যেমন আশা জাগায়, তেমনি বর্তমান সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। এ অবস্থায় বিএনপির মতো একটি সুসংগঠিত দলের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল প্রয়াস, বিশেষ করে হাটহাজারীতে লিফলেট বিতরণের মতো উদ্যোগ, প্রমাণ করে যে দলটি জনগণের মাঝে তাদের বার্তা পৌঁছে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এই উদ্যোগ জনগণের মাঝে আশার সঞ্চার করেছে, যা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। একজন প্রতিবেদক হিসেবে আমার মতে, বিএনপির “রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা” শুধু একটি রাজনৈতিক প্রচারণা নয়; এটি একটি গণতান্ত্রিক ও সুশাসিত বাংলাদেশের স্বপ্ন। তবে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দলটির নেতৃত্ব, বিশেষত তারেক রহমান এবং ব্যারিস্টার মীর হেলালের মতো নেতাদের দক্ষতা, নিষ্ঠা ও দূরদর্শিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জনগণের আস্থা অর্জন এবং প্রতিটি স্তরে সমর্থন নিশ্চিত করতে দলটির উচিত প্রতিটি পদক্ষেপকে আরও স্বচ্ছ, কার্যকর ও জনকল্যাণমুখী করা। বাংলাদেশের মানুষ একটি পরিবর্তনের অপেক্ষায়। সেই পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে যদি বিএনপির মতো শক্তিশালী ও সঠিক পরিকল্পনাযুক্ত দল থাকে, তবে একটি উন্নত, সুশাসিত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।