শীতের সকাল। আকাশে সোনালি আভা, কুয়াশার হালকা পর্দা, আর নিস্তব্ধ শহর—যেন প্রকৃতি এখনো ঘুম জড়ানো চোখে তাকিয়ে আছে। গরম কম্বলের উষ্ণতা ছেড়ে বের হওয়াটা প্রথমে একটু কঠিন মনে হয়, কিন্তু জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই বাটালি হীলের সবুজ হাতছানি আমাকে টেনে নেয়। মনে হয়, প্রকৃতি যেন নীরবে ডাকছে—"এসো, আজও একটু আমার সান্নিধ্যে হাঁটো, একটু প্রশান্তির স্পর্শ নাও।"
আমি হাঁটি। প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে শরীর জেগে ওঠে, মন সতেজ হয়ে যায়। চারপাশে এক অপার্থিব সৌন্দর্য। বাতাসে ভেসে আসে ভেজা মাটির ঘ্রাণ, গাছের পাতায় শিশিরবিন্দু ঝলমল করে ওঠে। কোথাও পাখির কুজন, কোথাও নাম না জানা গাছের আড়ালে ঘাপটি মেরে বসে থাকা কোনো পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ—সব মিলিয়ে এক সুরেলা মায়াজাল।
অনেকে বলেন, শীতের সকালে হাঁটতে গেলে ঠান্ডা লাগে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, হাঁটতে শুরু করলেই শরীর গরম হয়ে যায়, বরফ শীতল বাতাসও তখন মনে হয় কোমল স্পর্শ হয়ে গেছে। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির সবুজ আলিঙ্গনে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, আমি যেন অন্য এক জগতে প্রবেশ করেছি—যেখানে সময় থমকে গেছে, যেখানে কেবল আমি আর প্রকৃতি।
বাটালি হীল আমার কাছে শুধু একটি পাহাড়ি পথ নয়, এটি এক নেশা, এক ভালোবাসা। প্রতিদিন সকালে যদি এই পথে না হাঁটি, মনে হয়, কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছি। যেন শহরের ধোঁয়া-ধুলোর মাঝে নিজেকে বন্দি করে রেখেছি। এখানে এলেই মনে হয়, আমি প্রকৃতির সান্নিধ্যে, আমি জীবনের কাছাকাছি।
কখনো কখনো আমি হাঁটতে হাঁটতে থমকে দাঁড়াই, গভীর শ্বাস নেই। অনুভব করি, এই বাতাসে এক অন্যরকম বিশুদ্ধতা আছে, যা শহরের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। গাছের পাতায় সূর্যের আলো পড়ে এক মোহনীয় দৃশ্য তৈরি করে, পাতার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারা রোদের কোমল কিরণ গায়ে এসে পড়ে, যেন প্রকৃতি তার স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে।
যারা এখনো শীতের সকালে ঘুমিয়ে থাকেন, তারা একদিন চেষ্টা করে দেখুন। শহরের দমবন্ধ করা জীবনে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে হলে, প্রকৃতির মাঝে একটুখানি হারিয়ে যেতে হলে, বাটালি হীলের এই পাহাড়ি পথে হাঁটার বিকল্প নেই। হাঁটতে হাঁটতে দেখবেন, প্রকৃতি আপনাকে এক অন্যরকম প্রশান্তি দিচ্ছে, এক অনাবিল আনন্দ দিচ্ছে—যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না, যা অনুভবেই পাওয়া যায়। প্রকৃতি আমাদের ডাকছে, শুধু আমরা সেই ডাকে সাড়া দিচ্ছি কি না, সেটাই প্রশ্ন। বাটালি হীল: প্রকৃতি, মানুষ ও শহর দেখা এক স্বপ্নময় সকাল
সকালবেলা বাটালি হীলে হাঁটতে যাওয়ার এক নিজস্ব আনন্দ আছে, যা কেবল হৃদয় দিয়েই অনুভব করা যায়। আমি যখন এই পাহাড়ি পথে পা ফেলি, তখন মনে হয়, আমি কেবল হাঁটছি না, প্রকৃতির সঙ্গে এক গভীর সংলাপে মেতে উঠেছি। পাখির ডাক, সবুজের সমারোহ, পাহাড়ের হালকা কুয়াশায় মোড়া সৌন্দর্য—সবকিছু মিলিয়ে এক অন্যরকম নেশা।
এখানে প্রতিদিন নানা বয়সী মানুষ আসে—কেউ স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে, কেউবা নিছক প্রকৃতির টানে। তরুণীদের দল হাঁটার মাঝে হাসি-ঠাট্টায় মাতোয়ারা হয়ে থাকে, কেউ বা ফিটনেস নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে। একদল জগিং করছে, অন্যদল সেলফিতে ব্যস্ত, আর কেউ বা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছে। জীবনের গতি এখানে অনেক বেশি প্রাণবন্ত, অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত।
কিন্তু আমার দৃষ্টি সবুজ বনানীর দিকে, আমার মন পড়ে থাকে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে শহর দেখার অনাবিল আনন্দে। বাটালি হীলের উঁচু থেকে পুরো শহরটাকে দেখলে মনে হয়, এ যেন এক চলমান চিত্রকলা—রাস্তায় ছুটে চলা গাড়ি, দূরে ছিমছাম গৃহকোণ, মাঝেমধ্যে মেঘের মতো ছড়িয়ে থাকা কুয়াশা, আর শহরের কোলাহল থেকে দূরে এসে পাওয়া এক নিস্তব্ধ প্রশান্তি।
আমি একজন সাংবাদিক, একজন লেখক। প্রতিদিন মানুষের জীবন, সমাজ, অপরাধ, রাজনীতি নিয়ে লিখি। কিন্তু এখানে এসে আমি এক অন্য মানুষ হয়ে যাই—একজন প্রকৃতির প্রেমিক, যিনি শব্দের মাধ্যমে এই পাহাড়ের সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে চান। আমার কলম যেন নিজেই পথ খুঁজে নেয়, যেন আমাকে মনে করিয়ে দেয়—"তুমি বাটালি হীলের কথা মন থেকে লেখো, কারণ এই পাহাড় শুধু মাটি-পাথরের স্তূপ নয়, এটি একটি অনুভূতি।" আমার কাছে বাটালি হীল শুধুমাত্র হাঁটার জায়গা নয়, এটি এক শুদ্ধতা, এক মুক্তির পরশ। এখানে আসলেই মনে হয়, আমি প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খুঁজে পাই, শহরের ব্যস্ততা ভুলে এক মুহূর্তের জন্য হলেও প্রকৃতির সন্তান হয়ে যাই। প্রতিদিনের এই হাঁটা কেবল শারীরিক ব্যায়াম নয়, এটি এক মানসিক পরিশুদ্ধি, এক আধ্যাত্মিক সংযোগ।
বাটালি হীল শুধু একটা পাহাড় নয়, এটা আমার সকালবেলার মুক্ত আকাশ, সবুজের মায়ায় জড়িয়ে থাকা এক অফুরন্ত ভালোবাসা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com