1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
চলন্ত বাসে ১৪ বছরের কিশোরীর গণধর্ষণ: একটি জাতির লজ্জার ইতিহাস পাহাড়ের নীরবতায় শব্দের জন্ম আশাশুনিতে ওয়াজেদ ফকির সরকারি খাস জমি নিজের নামে নিয়ে বিক্রি করায় এলাকা বাসীর ক্ষোভ! মুজিবনগর সরকার: স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা-লিপি তেকোটা প্রতিভার আয়োজনে বর্ষবরণ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য মঙ্গলশোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত নাছিম: সত্যের পথের এক নিবেদিত সংগ্রামী সিটিজি প্রপার্টি স্পোর্টস একাডেমি আয়োজিত ফুটসাল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নের জন্য ৩৫,০০০ টাকা পুরস্কার! ওসি মোঃ আফতাব উদ্দিনের দক্ষ নেতৃত্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার বেঈমানের ভিড়ে একলা সত্যের যোদ্ধা: আমি নাছিম সাদিয়ার আম্মু এবং এক অচেনা হৃদয়দ্বার

৩২ নম্বরের বাড়ির করুণ পরিণতি: শেখ হাসিনার দায়ভার

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৬৭ বার পড়া হয়েছে

ভারাক্রান্ত মনে এই লজ্জাজনক ইতিহাসের কথা লিখতে বসলাম। একজন সাংবাদিক হিসেবে সত্য প্রকাশ না করলে নিজেকেই অপরাধী মনে হয়। আজ যারা ৩২ নম্বরের এই ঐতিহাসিক বাড়িটি ধ্বংস করেছে, আমি তাদের সমালোচনা করতে চাই না। কারণ, তারা নিজেরা এই ধ্বংসযজ্ঞের নেপথ্যে থাকা রাজনৈতিক অসংগতি ও ষড়যন্ত্রের শিকার। তাদের কে বা কারা এভাবে ইতিহাস ধ্বংসের কাজে বাধ্য করেছে—এটাই এখন ভাববার বিষয়।
আজ সত্য বলার সময় এসেছে। ইতিহাসকে ধ্বংস করা যায়, কিন্তু মুছে ফেলা যায় না। যারা এই বাড়িটি নিশ্চিহ্ন করেছে, তারা হয়তো জানেই না, একদিন এই অপকর্মের সত্যটাই ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। সময়ের পরিক্রমায় সবাই হারিয়ে যাবে, কিন্তু ইতিহাস তাদের নাম ঠিকই মনে রাখবে—লজ্জার অধ্যায়ে, ধ্বংসের কাহিনিতে। ৩২ নম্বরের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটি শুধুই একটি স্থাপনা ছিল না; এটি ছিল ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী, এক বিপ্লবের প্রতীক। এই বাড়ি দেখেছে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের দিনগুলো, মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি, দেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের মুহূর্তগুলো। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত, এই বাড়ি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, একসময় যা ছিল জাতির গৌরবের প্রতীক, সেটিকেই ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়া হলো। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর, ইতিহাসের এই মূল্যবান স্থাপনাটির ওপর আঘাত আসে, প্রায় ধ্বংস করে দেওয়া হয় অতীতের এক বিশাল অংশ। কিন্তু সেটাই ছিল না শেষ। ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, শেখ হাসিনার ভাষণকে কেন্দ্র করে ৩২ নম্বরের বাড়িটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হলো। এক অবিশ্বাস্য, মর্মান্তিক দৃশ্য! বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি, সংগ্রামের চিহ্ন, ইতিহাসের সাক্ষী—সবকিছু মুছে ফেলা হলো নিষ্ঠুরভাবে।

এই নির্মম ধ্বংসযজ্ঞের দায়ভার সম্পূর্ণভাবে শেখ হাসিনার ওপর বর্তায়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে তিনি কীভাবে তার বাবার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িকে ধ্বংস হতে দিলেন? ইতিহাস কি একদিন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে না? শেখ হাসিনার শাসন কীভাবে এমন একটি অধ্যায় রচনা করল, যেখানে জাতির পিতার স্মৃতিচিহ্নই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল?
একদিন আমরা কেউ থাকব না। কিন্তু ইতিহাস থাকবে। ইতিহাসবিদরা যখন সত্য লিখবেন, তখন তারা ৩২ নম্বরের বাড়ির এই করুণ পরিণতির কথা বলবেন। তারা বলবেন, কেমন করে একসময় জাতির গর্বের প্রতীক হয়ে ওঠা এই বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছিল, কেমন করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে একেবারে বিলীন করে দেওয়া হয়েছিল। আজকের এই ধ্বংস শুধুমাত্র একটি বাড়ির নয়, এটি ইতিহাসের অবমাননা, জাতির আত্মপরিচয়ের ওপর আঘাত। কিন্তু সত্য কখনও চাপা থাকে না। শেখ হাসিনা হয়তো নিজের ইচ্ছামতো ইতিহাস লিখতে চাইবেন, কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস একদিন প্রকাশ পাবে। ৩২ নম্বরের বাড়ির ধ্বংস হবে সেই ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়।
“মাফ করবেন, কিছু অপ্রিয় সত্য লিখতে বাধ্য হচ্ছি।” হয়তো এই শিরোনাম দেখে অনেকে আমাকে পাগল ভাবতে পারেন, কিন্তু পুরো লেখাটি না পড়লে এর ভেতরের সত্য উপলব্ধি করা সম্ভব হবে না। তাই, আপনাদের প্রতি ধৈর্য্য ধরে লেখাটি পড়ার অনুরোধ রইল।
শিরোনামটা পড়ে অনেকেই অবাক হবেন: শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছেন এবং ৩২ নং বাড়ি ধ্বংস করেছেন! কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমরা সবাই জানি যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। তা হলে নতুন করে কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেন শেখ হাসিনা? আবার ৩২ নং ধানমন্ডি বাড়ি, যা দূর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল, সেটাও তো আমরা জানি।
তাহলে প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনা কীভাবে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ধ্বংস করলেন? এর ব্যাখ্যা খুঁজতে হলে ইতিহাসের গভীরে যেতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, তিনি বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের পাতা থেকে ধ্বংস করে ফেলেছেন। শেখ হাসিনা ভুলে গিয়েছেন যে বঙ্গবন্ধু কেবল তার জন্মদাতা পিতা নন, তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির মহানায়ক। অথচ আজ বঙ্গবন্ধুকে ভাস্কর্যে বন্দি করে জাতির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। কেন এত ভাস্কর্য বানাতে হলো? কেন বঙ্গবন্ধুর নাম সব জায়গায় বসাতে হবে? বঙ্গবন্ধু কি এতটাই সাধারণ যে তাকে এভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে? বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির ইতিহাসের রাজপুত্র, তাকে কেন এভাবে সাধারণ করে তুলতে হবে? জাতির পিতাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস কখনোই লেখা সম্ভব নয়। তাহলে কেন এই অতিরিক্ত প্রচেষ্টা? বঙ্গবন্ধু তো ইতিহাসের নায়কই ছিলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। শেখ হাসিনা তাকে হিরো বানানোর চেষ্টা করছেন, অথচ তিনি আগেই ছিলেন ইতিহাসের হিরো। কিন্তু তিনি মওলানা ভাসানীর মতো বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরুদের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান কখনো বঙ্গবন্ধু হতে পারতেন না, যদি মওলানা ভাসানীর ভূমিকা না থাকত। ভাসানীকে বাদ দিলে বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাবে না। পাশাপাশি, ইতিহাসে তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মুনসুর আলী ও কামরুজ্জামানদের অবদানকে উপেক্ষা করে কিভাবে স্বাধীনতার ইতিহাস লেখা সম্ভব? এই নেতারাই তো দক্ষ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকলেও, এই নেতারাই ভারতে বসে কৌশলে যুদ্ধ পরিচালনা করেন, আপস না করেও দেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন।
অথচ, শেখ হাসিনা তাদের ইতিহাস ধরে রাখার জন্য বিশেষ কিছুই করেননি। অথচ এই নেতাদের বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঠিক ইতিহাস লেখা অসম্ভব। অন্যদিকে, মেজর(রাষ্ট্রপতি) জিয়াউর রহমানের বিদ্রোহ ও তার অবদানও গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বোয়ালখালীতে আশ্রয় নিয়ে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ১১টি সেক্টরের প্রথম কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ছিল অতুলনীয়। বঙ্গবন্ধু নিজেও তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করেন এবং সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন।
কিন্তু আজ জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। তাকে রাজাকার বলা, ছোট করা হচ্ছে—যা বঙ্গবন্ধু কখনো বলেননি। বরং, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় দায়িত্বে থাকা সেনাপ্রধানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে, অথচ তিনি বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। এই বৈষম্য কেন সৃষ্টি হলো? জিয়াউর রহমানকে বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস কখনোই লেখা সম্ভব নয়।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসকে নিজের মতো করে অতিরঞ্জিত করার যে প্রচেষ্টা করেছেন, তা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার শামিল। তাই যদি কেউ প্রশ্ন করে, বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে কে হত্যা করেছে, সবাই একবাক্যে বলবে—শেখ হাসিনা। তার পতনের পর বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য এবং ছবিতে যে অপমান করা হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক। শেখ হাসিনা যদি অন্য নেতাদের যথাযথ সম্মান দিতেন, তাহলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।
বঙ্গবন্ধুকে যেমন ইতিহাস থেকে হত্যা করা হয়েছে, তেমনি ইতিহাসের অন্যতম স্বাক্ষী ৩২ নম্বর রোডের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটিও আজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আর এই ধ্বংসের মূল নায়ক শেখ হাসিনা!
খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্ট মঈনুল রোডের বাড়ি উচ্ছেদ: শাসনযন্ত্রের এক অসম্মানজনক অধ্যায় বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল আদালতের রায়কে সামনে রেখে, তবে এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অনেকেই দেখেন। কেন তাকে উচ্ছেদ করতে হলো, এর প্রশ্নটি দীর্ঘকাল ধরে বিতর্কিত। একটি বাড়ি থেকে দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে রাতারাতি উচ্ছেদ করে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া, নিঃসন্দেহে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।এটি কি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল? যারা বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ সেনা সদস্যদের পরিবারের জন্য সেই বাড়িতে আশ্রয় গড়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাদের উদ্দেশ্য হয়তো ছিল প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রশ্ন থাকে, দেশে কি আর কোনো জায়গা ছিল না? খালেদা জিয়ার বাড়িটি কি বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত ছিল? যদি না হয়, তাহলে কেন একটি অবৈধ স্থাপনার কথা বলে তাকে এভাবে উচ্ছেদ করা হলো?
সেই সময় খালেদা জিয়ার কান্না এবং বেদনাবিধুর মুখাবয়ব কর্মীদের মনকে আহত করেছিল। ইতিহাস সাক্ষী যে তার চোখের জল অনেক কর্মীর হৃদয়ে গভীর আঘাত করেছিল। সেই বেদনাবিধুর দৃশ্য কর্মীদের মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বেলে দেয়, যা পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রভাব ফেলেছিল।
৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি ও ৬৭৭ নম্বর ইতিহাসের ক্ষতি
৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি, যা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহ্ন বহন করে, তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার বাড়ির তুলনা কিছুটা আবেগময়। বঙ্গবন্ধুর এই বাড়ি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এ বাড়ি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কিন্তু সেই বাড়ি যখন ধ্বংস হয়, তখন এর জন্য দায়ী কাকে বলা হবে?শেখ হাসিনার সরকার যদি খালেদা জিয়ার বাড়ি ধ্বংস না করত, তাহলে কি ৩২ নম্বর বাড়ির ইতিহাস এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো? এটি ভাবনার বিষয়। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি কোন ব্যক্তি বিশেষের নয়, এটি ছিল আমাদের দেশের ইতিহাসের একটি জীবন্ত অংশ।
শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি ও নিপীড়ন অন্যদিকে, শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি এবং হরিলুটের যে অভিযোগ উঠেছে, তা আজ কারও অজানা নয়। তার আশ্রয়ে বহু মানুষ অঢেল সম্পদ গড়েছে। অথচ খালেদা জিয়াকে কোনো সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির প্রমাণ ছাড়াই কারাবন্দি রাখা হয়েছে। নিজের ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থ এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করার অপরাধে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, অথচ একই ধরনের অভিযোগ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ছিল। কিন্তু তার মামলাগুলি খারিজ হয়ে যায়, এবং খালেদা জিয়ার উপর শাস্তির বোঝা চাপানো হয়।
শেখ হাসিনার শাসনকালে শত শত মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক রাখা হয়। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, জনগণ তাদের অধিকারের দাবিতে কথা বলার সাহস পায় না। শেখ হাসিনা বিরোধী যেকোনো অভিযোগকেই কঠোরভাবে দমন করেছেন। আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন শেখ হাসিনা?
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রশ্ন এবং শেখ হাসিনার শাসনের প্রভাব বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েও, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের কারণে তার ভুলগুলো প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। তার চারপাশে বেয়াদব চাটুকারের দল বসেছিল, যারা শেখ হাসিনার দ্বারা বহু অন্যায় কার্যকর করিয়েছে। পুলিশ বাহিনীকেও কলঙ্কিত করা হয়েছে ভোটারবিহীন নির্বাচনে তাদের ব্যবহার করে।
শেখ হাসিনার শাসনের বিচার করলে, ইতিহাসের কাছে তিনি একদিন কলঙ্কিত হবেন। বঙ্গবন্ধুকে একবার ১৫ আগস্ট হত্যাকারীরা হত্যা করেছে, কিন্তু শেখ হাসিনা তার ভুল নীতির মাধ্যমে আবারো জাতির কাছে সেই আঘাত পৌঁছে দিয়েছেন।
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশের সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করতে শুরু করেছে যে তার শাসনামলে বেশ কিছু গুরুতর ভুল এবং রাজনৈতিক অপকৌশল দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর ছিল। এই উপলব্ধির পেছনে কয়েকটি বিশেষ ভুলের দিক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিচে সেই ভুলগুলির একটি পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হলো:

১. গণতন্ত্রের অবক্ষয়
শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য নানা কৌশল নেওয়া হয়, যার ফলে মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে পড়ে। বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক অধিকার হরণ, স্বচ্ছ নির্বাচনের অভাব, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দেশের গণতন্ত্রকে একধরনের স্থবিরতার দিকে ঠেলে দেয়।

২. দুর্নীতির মহামারী
শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি এক ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছে যায়। সরকার পরিচালনায় ঘনিষ্ঠ দলীয় কর্মীদের দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো পরিচালিত হতে থাকে, যার ফলে জনসম্পদ লুটপাট এবং উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ব্যাপক আকার ধারণ করে। জনগণের করের অর্থের সঠিক ব্যবহার না হওয়া, এবং বিভিন্ন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও তাদের ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার খবর প্রায়শই সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। এসব কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়তে বাধ্য হয়।

৩. বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের উপর নিয়ন্ত্রণ শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন, যা দেশের আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করে দেয়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দলীয় স্বার্থে প্রভাবিত হয় বলে জনমনে একটি বিতর্কিত ধারণা গড়ে ওঠে। পাশাপাশি, প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার ফলে দেশের স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটে।

৪. মিডিয়া এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন
শেখ হাসিনার শাসনে সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন আইন ব্যবহার করে সাংবাদিকদের হয়রানি ও গ্রেফতার করা হয়। এ ধরনের দমনমূলক আচরণের ফলে স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং বাকস্বাধীনতার উপর একটি স্থায়ী সংকট তৈরি হয়, যা দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার জন্ম দেয়। সরকারবিরোধী কোনো মতামত বা প্রতিবাদ উঠলেই তা কঠোরভাবে দমন করার ফলে মানুষ সরকারের প্রতি আস্থা হারাতে শুরু করে।

৫. বৈদেশিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সংকট
শেখ হাসিনার শাসনে বাংলাদেশ বৈদেশিক নীতি এবং বাণিজ্যিক অংশীদারত্বে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। কিছু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অযাচিতভাবে একটি নির্দিষ্ট দেশের প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়ানো হয়, যার ফলে বৈশ্বিক পরিসরে দেশের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া, অবকাঠামো উন্নয়নের নামে নেয়া বিদেশি ঋণ প্রকল্পগুলি দেশের অর্থনীতিতে একটি ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে, যা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সংকটের দিকে নিয়ে যায়।

৬. রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের উপর নির্যাতন ও নিপীড়নের অভিযোগও বারবার উঠে এসেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর পুলিশি নির্যাতন, গুম, খুন, এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। এগুলোর ফলে দেশে একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়, যেখানে মানুষের মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়েছে। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনগণ ধীরে ধীরে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করে।
৭. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের অবহেলা
শেখ হাসিনার শাসনে শিক্ষাখাতে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম দেখা যায়। উন্নয়নমূলক প্রকল্পের নামে বিশাল বাজেট বরাদ্দ হলেও, তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষার মান উন্নত করা সম্ভব হয়নি। একইভাবে, স্বাস্থ্য খাতেও নানামুখী দুর্নীতি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অপ্রতুলতার কারণে জনসাধারণের সেবা প্রাপ্তিতে বড় বাধা সৃষ্টি হয়। কোভিড-১৯ মহামারির সময় এ দুর্বলতা সবচেয়ে বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে, তার শাসনামলে বহু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু ভুল এবং অব্যবস্থাপনা দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, এবং সার্বিক উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর ছিল। শেখ হাসিনার সরকার হয়তো কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়ন এনে দিয়েছে, কিন্তু তার শাসনামলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, এবং সুশাসনের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে বহু বছর সময় লাগতে পারে।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট