চেরাগি পাহাড়—চট্টগ্রামের সাহিত্যের বাতিঘর, চিন্তার মিছিল, প্রতিবাদের প্রাণকেন্দ্র। এই ঐতিহাসিক মোড়ে নবীন-প্রবীণ লেখকদের জন্য এক আশ্রয় তৈরি হয়েছে, যার নাম ‘ক্যাফে চেরাগি চক’। রুচিশীল রেস্তোরাঁ নয়, এটি এক সত্যিকারের আড্ডাখানা, যেখানে শব্দেরা খেলা করে, চিন্তাগুলো মুক্ত বাতাসে ভেসে বেড়ায়। গত পহেলা এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে এই ‘চেরাগি চক’, আর আজ সেখানে বসে কিছু সময় কাটিয়ে এলাম। আমার অফিসের ঠিক নিচে, চেরাগি পাহাড় বঙ্গবন্ধু ভবন যেখানে আমি ১৯৮৮ সাল থেকে আছি। তবে আমি খুব বেশি নীচে নেমে আড্ডায় অংশ নেইনি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শত শত তরুণ-তরুণী চেরাগির বাতাসে মিশে যায়, তারা কথা বলে, স্বপ্ন দেখে, ভবিষ্যতের সুর বুনে। কিন্তু লেখক, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিকদের জন্য এমন একটি বিশেষ আড্ডার প্রয়োজন ছিল, যা আজ পূরণ হয়েছে। আমি যখন চেরাগি চকের এক কোণে বসেছিলাম, মনে হলো এখানে বসেই লেখা যাবে প্রতিবাদের কবিতা, যার প্রতিটি শব্দ হবে বজ্রের মতো শক্তিশালী। এখানে বসেই লেখা যাবে উপন্যাস, যেখানে তারুণ্যের ছোঁয়া থাকবে, যেখানে থাকবে বিপ্লবের সুবাস। প্রেমের গল্পও লেখা যাবে, তবে তা শেষ হবে না, কারণ প্রেম তো এক নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ। এখান থেকে লেখা যাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রের রাজনীতির কথা, তবে তা পড়ার মতো কেউ থাকবে কি না, সে নিয়ে সংশয় থাকতেই পারে। তবে এখান থেকেই গর্জে উঠতে পারে এক নতুন মিছিল, যেখানে মানুষ তার অধিকারের দাবি নিয়ে নামবে রাজপথে। এখানে বসে সাহিত্য সংস্কৃতির দীর্ঘ পথচিত্রও আঁকা যাবে, গড়ে উঠবে সভা-সেমিনার, লেখকদের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এই ক্যাফেটি পরিচালনা করছেন মেকআপ আর্টিস্ট ইশা ধর। তার পরিশীলিত রুচি, শান্ত ব্যক্তিত্ব আর পরিশ্রমে মনে হচ্ছে, এটি একটি সফল আড্ডাস্থল হয়ে উঠবে। তবে তিনি একা নন, তার ভাইও রয়েছেন পাশে। খাবারের আইটেমও সহজ, দামও সাশ্রয়ী।
আমার লেখক-সাংবাদিক বন্ধুদের এই নতুন আশ্রয়ে আমন্ত্রণ জানাই। তবে শুধু লেখকরাই নন, প্রেমিক-প্রেমিকারাও জমিয়ে তুলেছে এই আড্ডা। দোকানীর লাভ হোক বা না হোক, একদিন এখান থেকে জন্ম নেবে কালজয়ী সাহিত্য, উঠে আসবে নতুন গল্প, কবিতা, উপন্যাস।
চেরাগী চৌক – যেখানে সন্ধ্যা নামে আলোর রঙে, আর গল্প জমে মশলাদার স্বাদে। এখানে শুধু পেট নয়, মনও ভরে যায়। আসুন, দেখে নেওয়া যাক কী কী পাওয়া যাবে, আর কোন স্বাদের ডাকে মন ছুটে যাবে! স্ন্যাকস: ক্ষুধার ছোট্ট আয়োজন- লুচি (১০/-) – সোনালি ফোলানো লুচি, যেন শৈশবের সকালের ঘ্রাণ। ছোলা ডাল মসলা (৭০/-) – মশলাদার ছোলার মাখা মাখা স্বাদ, গরম লুচির আদর্শ সঙ্গী। চিকেন মসলা (৭০/-) – নরম মুরগির মাংসে মশলার কারুকাজ, রসনায় ঝাল-ঝাল এক উপহার।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই (১৫০/-) – সোনালি খাস্তা আলুর কাঠি, চায়ের কাপে গল্প জমাতে অপরিহার্য। ক্রিসপি চিকেন ফ্রাই (৯০/-) – বাইরে মুচমুচে, ভিতরে রসালো—এ যেন স্বাদের ছোট্ট বিস্ময়। চিকেন ফ্রাই (৪ পিস, ১৯০/-) – চার পিস মশলাদার স্বাদ, যা একলা খেলে অপরাধবোধ হবে!
পাস্তা (১৮০/-) – ইতালির ছোঁয়া, কিন্তু স্বাদে চেরাগী চৌকের নিজস্বতা।
চাউমিন (১৮০/-) – নরম নুডলসে সবজির নৃত্য, এক প্লেটে চাইনিজ মুগ্ধতা।
চায়ের এক ফোঁটা উষ্ণতা-
মসলা চা (১৫/-) – এলাচ-দারুচিনির গন্ধে এক কাপ উষ্ণ প্রশান্তি।
ব্ল্যাক টি (১০/-) – সরল অথচ গভীর, ঠিক জীবন দর্শনের মতো। শীতল পানীয়: গরম দিনের প্রশান্তি
মাঠা (৭০/-) – দইয়ের শীতলতা আর মশলার সামান্য কষাঘাত—এক চুমুকেই মন জুড়িয়ে যায়।
পানি (৫০০ মি.লি. ২০/-) – প্রকৃতির নির্মলতা, জীবন ধরে রাখার মৌলিক উপাদান।
সেভেন আপ (২৫০ মি.লি. ২৫/-) – গ্যাসের ঝটকা, মনকে এক নিমিষে সতেজ করে তুলবে।
কোকা কোলা (২৫/-) – পুরনো দিনের ক্লাসিক স্বাদ, এখনো সমান মজাদার।
মিন্ট লেমন (৬০/-) – লেবুর টক-মিষ্টি ছোঁয়া আর পুদিনার ঠান্ডা শিহরণ।
চেরাগী চৌক শুধু খাবারের ঠিকানা নয়, এটি গল্পের আড্ডা, সন্ধ্যার ছোঁয়া আর মনের আরাম। একবার এসেই দেখুন, স্বাদের নতুন অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে!
‘চেরাগি চক’ শুধু একটি ক্যাফে নয়, এটি এক নতুন সাহিত্যিক বিপ্লবের সূচনা।