চিটাগং ক্লাবের ছায়াময় প্রাঙ্গণ, তার এক কোণে বসে থাকা দুটি দীপ্তিময় মুখ। একদিকে উপমহাদেশের কিংবদন্তি নজরুল সংগীত শিল্পী, জাতীয় কবি নজরুল মঞ্চের সভাপতি, আমাদের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় ফরিদা আপা—যাঁর কণ্ঠে যুগ যুগ ধরে ভেসে আসে বিদ্রোহ আর প্রেমের সুর। অপরদিকে, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সহচরী, আমার হৃদয়াধিকারিণী, মায়াময় হাসির অধিকারিণী সেলিনা আক্তার। আজ তাঁদের দুজনকে পাশাপাশি দেখে মনে হলো, যেন দুটি পৃথক রঙের ফুল, অথচ একই গন্ধে মাখানো—একই সূর্যের আলোয় ফুটে ওঠা।
এই ছবিটি শুধু একটি মুহূর্তের দলিল নয়, বরং একটি অনুভূতির প্রতিচ্ছবি, যা কথায়-কলমে ধরা যায় না সহজে। ফরিদা আপার আমন্ত্রণে চিটাগং ক্লাবে আয়োজিত দুপুরের এক বিশেষ ভোজসভায় আমরা ছিলাম অতিথি, কিন্তু তাঁর আন্তরিকতা ও অপার ভালোবাসায় সেই ভোজ রূপ নিয়েছিল এক আবেগঘন পারিবারিক মিলনমেলায়। আপা শুধু শিল্পে নয়, হৃদয়ের বিশালতাতেও অনন্য। তাঁর স্নেহে, তাঁর হাসিতে, তাঁর ব্যবহারে যে উষ্ণতা—তা প্রাণ ছুঁয়ে যায় গভীরভাবে।
সেলিনা আপা, আমার জীবনের আলোকবর্তিকা, সবসময়ই ছিলেন বিনয়ী, মমতাময়ী, সৌজন্যপূর্ণ এক নারী। আজ তাঁকে ফরিদা আপার পাশে বসে দেখে মনে হলো—এই দুজনের বন্ধন যেন দুই নদীর শান্ত মিলন, এক অপার্থিব সংলাপ। তাঁরা যেন শিল্প আর ভালোবাসার দুই উজ্জ্বল প্রতীক।
এদিনের বিকেলটা ছিলো এক রকম সুরভিত স্মৃতি, যা হৃদয়ের পাতায় আজীবন লেখা থাকবে। জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে একটু বাইরে এসে, এ যেন এক পরিপূর্ণ মানবিক মুহূর্ত—নির্মল, নিঃশব্দ, অথচ গভীর অনুভবপূর্ণ।
এই ছবিটি তাই শুধু একটি দৃশ্য নয়, এটি এক অনন্ত আবেগের প্রতীক, যা বলে—বন্ধন যখন হৃদয় থেকে হয়, তা হয়ে ওঠে চিরন্তন। আর সেই বন্ধনের ভাষা হলো স্নেহ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।