চট্টগ্রামের অন্যতম বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মহল শপিং কমপ্লেক্স-এ দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি দোকান সংক্রান্ত জটিলতা অবশেষে প্রতারণা, জালিয়াতি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মামলায় রূপ নিয়েছে। কোতোয়ালি থানার সুনির্দিষ্ট তদন্তে প্রতারণার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার পর, থানায় দায়ের করা হয়েছে ফৌজদারি মামলা নং ৫২, তারিখ ২৯/৩/২০২৫, ধারা ৪০৬/৪২০/৫০৬-এ।
আসামির পরিচয় ও রাজনৈতিক প্রভাব, এই মামলার ১ নম্বর আসামি আহম্মদ উল্লাহ মামুন, পিতা: শামসুল আলম, সাং: মহল মার্কেট, লালদীঘি পাড়, চট্টগ্রাম। ২ নম্বর আসামি রবিউল আলী, পিতা: খাইরুল হক, সাং: মহল মার্কেট, একই ঠিকানা। দুজনেই সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী একটি প্রতারক চক্রের সদস্য, এবং দীর্ঘদিন ধরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় প্রভাব বিস্তার করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে আসছে। আসামিরা বর্তমানে পলাতক, পুলিশ তাদের সন্ধানে একাধিক অভিযান চালাচ্ছে। জানা গেছে, রবিউল আলীর বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় এবং মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় পূর্বে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এ কারণে তারা ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হিসেবেও পুলিশের নজরে রয়েছে।
প্রতারণার সূচনা ও ঘটনাপ্রবাহ
বিতর্কিত এ/১২ নম্বর দোকানের বৈধ মালিক মোঃ ইউসুফ মজুমদার। তার অভিযোগ অনুযায়ী, মামুন মৌখিক চুক্তিতে সাময়িকভাবে দোকানের অর্ধেক ভাড়া নেন। চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত, কিন্তু চুক্তির পরও মামুন দোকান ছাড়েননি বরং ভাড়া না দিয়ে দখলদারি চালিয়ে যান। ইউসুফ মজুমদারের হিসাব মতে, মামুনের বকেয়া ভাড়া ৪,৩৬,৫০০/- টাকা, যার মধ্যে আংশিক পরিশোধ করলেও এখনো ২,৮১,৫০০/- টাকা বকেয়া রয়েছে। শুধু তাই নয়, মামুন দোকানটি নিজের দাবি করে অন্যদের কাছে উপ-ভাড়ায় দিয়ে বিপুল অর্থ আদায় করেছেন।
রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দখলের চেষ্টা ইউসুফ মজুমদার অভিযোগ করেছেন, তিনি কুমিল্লার বাসিন্দা হওয়ায় মামুন স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দোকান দখলে রেখেছেন। ঘটনাটি তিনি ১৮ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মহল শপিং কমপ্লেক্স ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু সমিতির সদস্য সচিব এবং প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ বরিউল আলী (বর্তমানে মামলার ২ নম্বর আসামি) উল্টো তাকে হুমকি দেন। বরিউলের হুমকির ভাষ্য ছিল: "তোমার এখানে কোনো দোকান নেই। মালিকানা দাবি করতে আসলে তোমাকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে।"
গুপ্ত হামলা ও প্রাণনাশের হুমকি এরপর ইউসুফ মজুমদার দ্বিতীয়বার অভিযোগ করেন ৭ জানুয়ারি ২০২৫। সমিতি আশ্বাস দেয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ঘটলো এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। মামুন ও তার সহযোগীরা পুরাতন গীর্জার গুদামঘরে ডেকে নিয়ে ইউসুফ মজুমদারকে আটকে রাখেন, সেখানে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জোর করে দোকানের মালিকানা ত্যাগের স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রাণভয়ে ইউসুফ মজুমদার কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে কোতোয়ালি থানায় আশ্রয় নেন। তদন্তে অকাট্য প্রমাণ-ওসি (অপারেশন) রুবেল-এর নেতৃত্বে পরিচালিত তদন্তে স্পষ্টভাবে উঠে আসে যে, আহম্মদ উল্লাহ মামুন প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে দোকান দখলে রেখেছেন, এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ওসি আব্দুল করিম মামুন ও রবিউলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেন। ভুক্তভোগীর বক্তব্য- মোঃ ইউসুফ মজুমদার বলেন, "আমি এই দোকানের বৈধ মালিক। মামুন আমাকে প্রতারণা করে দখলদারি চালিয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়েছে এবং রাজনৈতিক দাপটে সবদিক থেকে হয়রানি করেছে। আমি ন্যায়বিচার চাই। থানার তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে, আমি এখন আমার সম্পত্তি ফিরে পেতে চাই।"ওসির বক্তব্য-
কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিম বলেন,
"তদন্তে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, মামুন ও রবিউল প্রতারণার মাধ্যমে দোকান দখলের চেষ্টা করেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং প্রকৃত মালিকের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।"
চট্টগ্রাম ব্যবসায়ী মহলে আলোড়ন-
এই ঘটনায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যদি এমন প্রতারকচক্র দখলবাজিতে পার পেয়ে যায়, তাহলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা কোথায়? কোতোয়ালি থানার দৃঢ় ও কার্যকর ভূমিকা এ ক্ষেত্রে প্রশংসাযোগ্য। অনেকেই বলছেন, এই মামলা ভবিষ্যতে অন্যদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com