1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
রাজনীতির আড়ালে বিশৃঙ্খলার ছক: ঢাকামুখী কর্মসূচি ঠেকাতে চট্টগ্রামে পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে প্রতিবাদী বজ্রনিনাদ: চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মানববন্ধনে উত্তাল জনতা নিশ্ছিদ্র ভালোবাসার আলোয় মোড়া “দাদীর ছায়া কাইয়া” ইলিশ-পান্তা ও বর্ষবরণ: ইতিহাসের আলোকপাতে বাঙালিয়ানার প্রকৃত মানে বাংলা এক্সপ্রেস: সংবাদ জগতের এক নতুন সূর্যোদয় চট্টগ্রামের রাজনীতির রাজপুত্র: রাজনীতির নির্ভরতার প্রতীক আব্দুল্লাহ আল নোমানকে নিয়ে হৃদয়ভরা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিজ ঘরেই পরবাসী: সিইউজে’র তালাবদ্ধ কার্যালয়,মুক্তির অপেক্ষায়! এক বছরেও গ্রেফতার হয়নি শহিদুল্লাহর হত্যাকারী বিপ্লব—প্রশাসনের নীরবতা নাকি প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া! সিইউজে কার্যালয় দখলমুক্ত করার দাবিতে স্মারকলিপি: সাংবাদিকদের ঐক্য ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার আহ্বান ঝিনাইগাতীতে বিজিবির অভিযানে বিপুল পরিমাণে চোরাচালানী কাপড় জব্দ

ইলিশ-পান্তা ও বর্ষবরণ: ইতিহাসের আলোকপাতে বাঙালিয়ানার প্রকৃত মানে

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ— এ যেন শুধু একটি দিন নয়, বরং বাঙালির সংস্কৃতি, আত্মপরিচয় আর ঐতিহ্যের এক মহা সম্মিলন। সময়ের প্রবাহে, সমাজের রুচিবোধে, সংস্কৃতির অভিঘাতে আজ এই দিনটি যেন হয়ে উঠেছে এক ‘নির্ধারিত আনন্দের আনুষ্ঠানিকতা’। অথচ এ আনন্দ, এ উৎসব, আদতে কোথা থেকে এল— তার ইতিহাসকে সামনে না রেখে কি তা সত্যিকার অর্থে উদযাপন করা যায়?
আজ আমরা পহেলা বৈশাখ মানেই ধরে নিচ্ছি পান্তা ভাত আর ইলিশ মাছ। দামী রেস্তোরাঁ, অভিজাত হোটেল কিংবা তৃণমূলের মেলা— সবখানেই এ যেন এক অনিবার্য মেন্যু। কিন্তু প্রশ্ন জাগে— এই ইলিশ-পান্তা কি আদতেই বাঙালির হাজার বছরের নববর্ষ উৎসবের অঙ্গ ছিল? ইতিহাস বলছে— না।
‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ ছিল, কিন্তু ‘পান্তা-ইলিশে’ নয়- বাঙালির চিরায়ত প্রবাদ— “মাছে-ভাতে বাঙালি”— নিঃসন্দেহে আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও কৃষিনির্ভর জীবনের পরিচায়ক। এই উক্তির মধ্যে কোথাও কিন্তু পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ জুড়ে দেওয়া হয়নি। পান্তা ভাত বরাবরই ছিল কৃষিজীবী মানুষের ক্লান্ত দুপুর কিংবা ভোরের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের উপযোগী খাবার— সহজ, পরিশ্রম-সই, পুষ্টিকর। আর ইলিশ? সে তো বর্ষার মাছ, নদীর উথাল জলের সঙ্গে ভেসে আসা শ্রাবণ-ভাদ্রের সৌরভ। বৈশাখে ইলিশ ধরার মৌসুমও নয়, স্বাভাবিক পাওয়া যাওয়ার সময়ও নয়।
পহেলা বৈশাখ বর্ষার উৎসব নয়। এটি শুষ্ক গ্রীষ্মের সূচনা। শস্য তোলার মৌসুমের শেষলগ্ন। সুতরাং ইলিশ-পান্তা খাওয়ার জন্য এটি ছিল না কোনো ঐতিহাসিক উপযুক্ত সময়।
পহেলা বৈশাখের সূচনা ও হালখাতার গল্প- বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আনুষ্ঠানিক সূচনা সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে। ফসলি সনের সূচনা হয়েছিল অর্থনৈতিক প্রয়োজনে— খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে। চৈত্রের শেষে, বৈশাখের শুরুতেই নতুন বছরের হিসাব খোলা হতো, যাকে বলা হতো হালখাতা। জমিদার, মহাজন ও ব্যবসায়ীরা তাদের প্রজাদের, ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানাতেন বকেয়া পরিশোধের জন্য। এর সঙ্গে থাকত আপ্যায়ন, কখনো মিষ্টি-মণ্ডা, কখনো লাঠিখেলা বা কবিগানের আয়োজন।
এই সময়টিতে চালু হয়েছিল “পুণ্যাহ” নামের আরেক উৎসব— যেখানে প্রজারা জমিদার বাড়িতে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করত, বিনিময়ে পেত একবেলা খাবার ও কিছু বিনোদন।
তবে এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো— কোথাও ইতিহাস ইলিশ মাছের কথা বলেনি। ইতিহাসবিদ আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ তাঁর “নববর্ষ ও বাংলার লোক সংস্কৃতি” গ্রন্থে একে বিশ্লেষণ করেছেন বিশদভাবে। প্রখ্যাত গবেষক আখতার-উল-আলম লিখেছেন— এই নববর্ষের উৎসব ছিল মূলত জমিদার ও মহাজনের নেতৃত্বাধীন— একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে শোষণের ছায়া।
পান্তা-ইলিশ: ঐতিহ্য নয়, সমসাময়িক ফ্যাশন- আধুনিক কালে এসে পান্তা-ইলিশ হয়ে উঠেছে এক ‘ঐতিহ্যের পোশাক’— যার কোনো মূল নেই, শিকড় নেই, ইতিহাস নেই। বরং আছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য, মূল্যবৃদ্ধির কৌশল, এবং একধরনের উৎসবকেন্দ্রিক কৃত্রিমতা। পহেলা বৈশাখ এলে ইলিশের দাম বেড়ে যায় তিনগুণ, চারগুণ। যা মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। এই ছদ্ম-ঐতিহ্য আমাদের সত্যিকার সংস্কৃতির প্রতিরূপ নয়। বরং এটি এক ধরনের ভোগবাদী সংস্কৃতির প্রকাশ। আনন্দ শুভ যাত্রা— সময়ের প্রাসঙ্গিক সংশোধন-
পহেলা বৈশাখের সকালে “মঙ্গল শুভ যাত্রা” নামে যে শোভাযাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়, তার নাম পরিবর্তন করে এবার রাখা হয়েছে “আনন্দ শুভ যাত্রা”। এটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। কারণ, আনন্দই এই উৎসবের প্রকৃত প্রাণ।
তবে ইতিহাসে চোখ ফেরালে দেখা যায়— সম্রাট আকবর যদি এই অনুষ্ঠানের নাম দিতেন, তিনি হয়তো বলতেন “শুভ যাত্রা”। কারণ তার আমলে নববর্ষ ছিল এক শুভ সূচনা, এক নতুন অর্থবর্ষের আর্থ-সাংস্কৃতিক যাত্রা। এই প্রেক্ষাপটে “আনন্দ শুভ যাত্রা” নামটি যেমন সময়ের দাবি পূরণ করেছে, তেমনি আকবরের প্রবর্তিত ঐতিহাসিকতা যুক্ত হলে নামটি পেত
আরও এক মর্মস্পর্শী তাৎপর্য।
শেষকথা: ইতিহাস হোক আমাদের আয়না- বাঙালি জাতি ইতিহাস-ঐতিহ্যপ্রিয়। আমরা যত ইতিহাস জানব, তত সচেতন হব আমাদের সংস্কৃতিকে কৃত্রিমতা থেকে রক্ষা করতে। পহেলা বৈশাখ হোক উৎসবের দিন, আনন্দের দিন, সম্মিলনের দিন— তবে তা হোক ইতিহাসভিত্তিক, আত্মপরিচয়-নির্ভর, শিকড়ের সন্ধানী।
আমাদের বর্ষবরণ হোক গোলাভরা ধানের সুবাসে, পুকুরভরা মাছের ঐশ্বর্যে, আর হৃদয়ভরা বাঙালিয়ানায়— যেখানে প্রতিটি উৎসবই বলবে, “আমি বাংলায় কথা বলি, বাংলার ইতিহাস নিয়ে বাঁচি।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট