চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকার মেহেরাজ ভবনে কর্মরত দরিদ্র দারোয়ান শহিদুল্লাহকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ২০২৪ সালের এপ্রিলে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত মামলার মূল আসামি বিপ্লব ধরা পড়েনি। ধরা পড়েনি তার আশ্রয়দাতারা, যারা শহিদুল্লাহ হত্যার পরও আত্মীয়স্বজন আর প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বিপ্লব শুধু একজন হত্যাকারীই নন, অভিযোগ রয়েছে তিনি এই পরিকল্পিত হত্যার নেতৃত্ব দিয়েছেন। মোবাইল চুরির মিথ্যা অভিযোগ তুলে নিজ পরিবার ও আত্মীয়দের নিয়ে একজোট হয়ে মেহেরাজ ভবনের দারোয়ান শহিদুল্লাহকে উপর্যুপরি পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। হত্যার পর গড়াগড়ি দিয়ে সাজানো হয় নাটক—‘হার্ট অ্যাটাক’ করে মৃত্যু! লাশ দ্রুত বাঁশখালীতে নিয়ে দাফনের আয়োজনও সম্পন্ন হয়েছিল। যেন বিচার তো দূরের কথা, কোন প্রশ্নই উঠবে না।
কিন্তু ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেন চান্দগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ জাহিদুল কবির। খবর পেয়ে তিনি পুলিশ পাঠিয়ে বাঁশখালী থেকে লাশ উদ্ধার করে পাঠান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। ময়নাতদন্তে উঠে আসে নির্মম সত্য—এটা হার্ট অ্যাটাক নয়, বর্বর হত্যাকাণ্ড।
হত্যার নেপথ্যে কারা?
মূল আসামি বিপ্লব সম্পর্কে জানা যায়, তিনি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মোনাফ সওদাগরের ভাইপো। তার পিতা মরহুম আব্দুল কুদ্দুস এবং পরিবার স্থানীয়ভাবে পরিচিত ও প্রভাবশালী। বিপ্লব নিজে এখন অবস্থান করছে চট্টগ্রাম শহরের সদরঘাট থানাধীন দারোগাহাট কামাল গেইট এলাকার নিজস্ব বিল্ডিংয়ে। বিপ্লবের সাথে সাথে তার শ্বশুর ও শালা—যারা হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল—তারা এখনো গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। অথচ জানা যায়, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে বোয়ালখালী উপজেলার চেয়ারম্যান রাজা মিয়ার ভাই এবং মোনাফ সওদাগরের কনিষ্ঠ কন্যার স্বামী শওকত জাহাঙ্গীর মামলাটি অন্য হাতে নেওয়ার জন্য নানাভাবে তদবির করে চালিয়েছিল।
বিচারহীনতার ভয়াবহ বার্তা-
প্রশ্ন জাগে—এতো প্রমাণ, এতো স্বাক্ষ্য থাকার পরও কেন গ্রেফতার হচ্ছে না মূল আসামি? কেন এক বছরের মধ্যে মামলার গতি থমকে আছে? এই ধরণের বিচারহীনতা একটি ভয়ংকর বার্তা দেয় সমাজে: দরিদ্র, প্রান্তিক মানুষ হত্যা করলে তার বিচার পাওয়া যায় না যদি হত্যাকারীর রাজনৈতিক ছত্রছায়া থাকে।
শহিদুল্লাহ ছিলেন একজন নিরীহ মানুষ। নিজের পরিবারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন, ভরসা ছিলেন স্ত্রী, সন্তানের। কিন্তু আজ তার স্ত্রী চোখে অন্ধকার দেখেন। সন্তানেরা প্রতিদিন প্রশ্ন করে: ‘আমার বাবার খুনিদের কেন ধরছে না পুলিশ?’
প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন-
আমরা জানি, বর্তমান প্রশাসন দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—বিপ্লবের মতো একজন হত্যাকারী যখন শহরের মধ্যেই নিজের বাড়িতে অবস্থান করে, তখন কেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? কে বা কারা তাকে রক্ষা করছে? কার ইশারায় এক বছরেও হয়নি চার্জশিট, হয়নি দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ?
একটি অনুরোধ, একটি প্রত্যাশা-
এই লেখার মাধ্যমে আমি শুধু একজন সাংবাদিক হিসেবে নয়, একজন নাগরিক হিসেবেও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি—এই হত্যা মামলাটির প্রতি পুনরায় সুদৃষ্টি দিন। দারোয়ান শহিদুল্লাহর মতো হাজারো গরিব, নিরীহ মানুষের বিশ্বাস রাষ্ট্রের প্রতি নষ্ট হয়ে যাবে যদি প্রভাবশালীদের ছায়ায় অপরাধীরা অবাধে ঘুরে বেড়ায়।
বিচারহীনতা নয়, দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক এই সমাজের বার্তা। বিপ্লব এবং তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় আনা হোক—এই প্রত্যাশায় থাকল শহিদুল্লাহর পরিবার, আর আমরা সবাই।
এই লেখা গণমাধ্যমে প্রকাশ করে বৃহৎ পরিসরে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। আপনি চাইলে এটি একটি রিপোর্টের পাশাপাশি মতামত কলামে বা মানবাধিকার ফিচার হিসেবেও সাজিয়ে নিতে পারেন। দরকার হলে আমি সেটিও করে দিতে পারি। বলবেন কি চাই?