এক ঝলক আলো এসে যেন ঘরে ঢুকে পড়ে – মুখভরা হাসি, চোখে টলমল তারার মতো ঝিকিমিকি চাহনি, আর কপালের কোণে কোঁকড়ানো চুলগুলো এমনভাবে নেচে ওঠে, যেন কোনো পুরোনো কবিতা নতুন করে লেখা হচ্ছে। হ্যাঁ, সে কাইয়া – আমার প্রাণপ্রিয় নাতনি, আমার নাতিন কাইয়া, যে আসলে দাদীর আদলেই গড়া এক রঙিন স্বপ্ন।
সে আমার জন্য পাগল! ঘরে ঢুকতেই ‘দাদা! দাদা!’ বলে ছোটে – যেন কোনো রাজকন্যা তার রাজাকে খুঁজে পেয়েছে। তার সেই অমলিন হাসি, ভাঙা ভাঙা গলার সেই কৌতূহলী প্রশ্ন, আর ছোট ছোট পায়ে টুং টাং করে ছুটে আসা – এই সবকিছুতেই আমার দিনের সূর্য ওঠে।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যতদিন যাচ্ছে, আমি খেয়াল করছি – কাইয়া আসলে দাদীর হুবহু প্রতিচ্ছবি। সেই মুখভঙ্গি, সেই ভ্রু কুঁচকে তাকানো, এমনকি রাগ করার ধরনও দাদীর মতো! মনে হয়, বিধাতা যেন আমার দাদীর চরিত্রকে ফটোকপি করে এই ছোট্ট মানুষটার মধ্যে ঢেলে দিয়েছেন – শুধু একটুখানি আধুনিকতা আর বাড়তি চঞ্চলতা দিয়ে।
সে যখন আমার পাশে এসে চুপচাপ বসে থাকে, এক হাতে আমার আঙুল ধরে রাখে – তখন আমার মন বলে, “এ তো আমার ফেলে আসা ভালোবাসার ছায়া, এক নতুন রূপে ফিরে এসেছে!”
সত্যি বলতে কী, কাইয়া আমার জীবনের রঙিন পেন্সিল। সে হাসে, আমি লিখি। সে দৌড়ায়, আমি স্বপ্ন দেখি। আর সে যখন ঘুমিয়ে পড়ে, আমি চুপচাপ তার পাশে বসে থাকি – মনে মনে ভাবি, “এ জীবনে যতটুকু ভালোবাসা জমা রেখেছিলাম, সবটাই বোধহয় এই একটিমাত্র মেয়ের জন্য।”
কাইয়া—তুমি আমার হৃদয়ের দাদীময় কবিতা।