পহেলা বৈশাখের সূর্যালোকে, বাটালি হীলে সবুজ বেষ্টনীর মাঝখানে বৈশাখের গান আর আড্ডার মজায় যখন আমরা ডুবে আছি, তখনই দেখা হয়ে গেল এক প্রাণোচ্ছল মানুষ—জাহিদ আলী। শতায়ু অঙ্গনের এই প্রাণপুরুষকে আমি বরাবরই মেলে ধরি উদ্যম ও মানবিকতার এক বিরল উদাহরণ হিসেবে। আজকের বৈশাখের দিনটিতে, পান্তা-ইলিশ খাওয়ার পর বৈশাখী উৎসবে যখন একটু ঢলে পড়েছিলাম, ঠিক সেই সময়ে তিনি এসে ফোন হাতে নিয়ে সেলফি তুলে নিলেন। আমি তো অবাকই হলাম—এত সহজ করে কেবল ফোন তুলেই মুহূর্তটাকে ধরে ফেললেন!
জাহিদ আলীকে নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় তার অনন্য অনুশীলনপ্রেমের কথা। শতায়ু অঙ্গনের শরীর চর্চার মূল চালিকাশক্তি যেন তিনিই। বিদেশি অভিজ্ঞতা, শৃঙ্খলা আর নিয়মিত অনুশীলনের মেলবন্ধনে তিনি আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করেন। বাটালি হীলের উঁচুতে দাঁড়িয়ে যখন আমরা নতুন দিনের আশায় বুক বাঁধি, তখন জাহিদ আলী আসেন—আনেন তার বহুভাষিক, বহুমাত্রিক অনুশীলনের কলাকৌশল। সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে, ক্লান্তি ভুলিয়ে সে শরীরচর্চার অনুশীলনে কী এক ছন্দময় উৎসবের আবহ তৈরি হয়, যা সত্যিই বিস্ময়কর।
তবে শুধু শরীর চর্চা-প্রেমিক বললে তাকে সম্পূর্ণ চেনা যায় না। জাহিদ আলী সুরের মায়ায়, সাহিত্য আর সংস্কৃতির চর্চাতেও সমানভাবে নিবেদিত। যখন শতায়ু অঙ্গনের বন্ধুদের নিয়ে বসে গান শুনি, তখন খেয়াল করি—তিনি নিমগ্ন হয়ে গানের গভীরে ডুবে থাকেন। বুঝি, এই মানুষটি লৌকিকতার আড়ালে এতদিন হয়তো বইয়ের পাতা উল্টে, গানের সুরে মন ভিজিয়ে এসেছেন। তার কথায় মিশে থাকে সাহিত্যের স্বাদ, তার আচরণে থাকে ভালোবাসার পরশ।
আবার, বন্ধুত্বের বিষয় এলে তিনি সবার আগে এগিয়ে আসেন। কারো অসুবিধা বা বিপদে পড়ার খবর পেলেই প্রাণপ্রিয় এ মানুষটি তৎক্ষণাৎ পাশে হাজির। “অন্যের কল্যাণেই নিজের কল্যাণ,”—এই মন্ত্রই যেন তিনি নিজস্ব জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। আজকের এই বৈশাখী উৎসবের দিনেও, গানে-আড্ডায় মেতে উঠলেও লক্ষ্য করলাম, সবার দিকে কত খেয়াল তার। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে এক বন্ধু কষ্টের কথা বললে অমনি সস্নেহে পাশে এসে দাঁড়ানোর মানুষ তিনি।
বৈশাখের নির্মল বাতাস, সবুজ ঘেরা প্রকৃতিতে ঢেউ খেলে যাওয়া পাতার মতো তার মন—উচ্ছল, খোলা আর নির্মল। খুব বেশি দিনের পরিচয় নয় আমাদের, তবুও যেন ঘনিষ্ঠতায় লম্বা সময়ের বন্ধুত্বের উত্তাপ টের পাই। সেই কয়েক দিনের কথোপকথনে, হাসি আর আলোচনায় মনে হয়, কত শত বছরের চেনা—মনে হয় সুরের ধারা আর মনখোলা কথায় ভেসে আসা এক আলোকিত সঙ্গী। আর মানুষটা নিজেই বা কেমন? সুপুরুষ তো বটেই, সবার চোখে পড়বে এমন উপস্থিতি তার। আর তার এই প্রাণবন্ত উপস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রসবোধ আর রোমান্টিকতার এক মিষ্টি মিশেল—যাকে প্রাণ খুলে “প্রেমিকপুরুষ” বলা যায়।
আজকের দিনটা ছিল আমাদের সবার জন্যই মনে রাখার মতো। পহেলা বৈশাখের আবহে পান্তা-ইলিশ খাওয়া থেকে শুরু করে শতায়ু অঙ্গনের অনবদ্য সাংস্কৃতিক আসরে গান আর আড্ডায় সারা সকাল যে কী দারুণ কেটেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। গানের মাঝে গানের অনুভূতি, প্রকৃতির মাঝখানে আমাদের বন্ধুত্ব—আর তারও মাঝখানে জাহিদ আলীর মতো এক অনন্য চরিত্রের উপস্থিতি সত্যিই আশ্চর্য কম্বিনেশন।
চোখ বন্ধ করলেই মনে পড়ে যায়, প্রকৃতির নিস্তব্ধতায় ভেসে আসছে গানের সুর, আর একইসঙ্গে দেখা যাচ্ছে সবার মাঝে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন জাহিদ আলী। তার যাপিত জীবনের বৈচিত্র্য, তার নিঃস্বার্থ সহযোগিতা, আর সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা যেন আমাদের জন্য পথপ্রদর্শক। তিনি দেখিয়ে দিচ্ছেন, শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সুস্থতাও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তার মতো মানুষ খুব বেশি মেলে না। তাই এই অল্প দিনের বন্ধুত্ব পরিণত হয়েছে এক নিবিড় আত্মीयতায়, যা যেন দীর্ঘদিনের সম্পর্কের স্মারক। পহেলা বৈশাখের এই আনন্দময় দিনে, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি আর ঐক্যের চেতনার এক অপরূপ বহিঃপ্রকাশ দেখতে পেলাম। আর সে আনন্দ আরও গভীর হলো যখন বন্ধুত্বের বাঁধন দৃঢ় করতে এগিয়ে আসলেন জাহিদ আলী—শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের আশ্বাস দিয়ে। এমন একজন নিপাট হৃদয়ের মানুষকে সামনে পেয়ে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত।
শতায়ু অঙ্গনের এই মজার মানুষ, প্রেমিকপুরুষ, শরীরচর্চার নেতা, সাংস্কৃতিক জগতের আপন বাসিন্দা—সব মিলিয়ে জাহিদ আলী আমাদের সবার হৃদয়ে এক স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, আগামী দিনগুলোতেও তিনি আমাদের কর্মস্পৃহা ও উচ্ছ্বাসের প্রেরণা হয়ে থাকবেন। সবার বিপদে পাশে এসে দাঁড়ানোর মানসিকতা আর সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি গভীর অনুরাগ দিয়ে তিনি যেভাবে আমাদের শিখিয়ে চলেছেন “নিয়মিত অনুশীলন, সদা ভালোবাসা,”—সেই সুর আমরা অনেক দিন ধরে বয়ে নিয়ে যাব।
আর এভাবেই বৈশাখের এই আনন্দ আয়োজন, গান আর আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে লেখার পাতায় উঠে আসুক উজ্জ্বল এক নাম—জাহিদ আলী।