আমরা দেখতে পাচ্ছি মাহবুবুর রহমান সাগর ও সাগর ভাবীকে। দুজনেই লাল রঙের মনোমুগ্ধকর পোশাকে পরিপাটি হয়ে বসে আছেন, এক অন্তরঙ্গ ও আনন্দঘন মুহূর্তে। সাগর ভাবী হাতে মাইক্রোফোন ধরে সুরের ছন্দে ভেসে যাচ্ছেন—মুখে ভরপুর আবেগ, চোখে গানের রেশ। তাঁর গলায় ঝুলছে রুচিশীল হার, হাতে সোনালি চুড়ি ও আঙুলে আংটি, যেন এক নান্দনিকতার প্রতিচ্ছবি। পাশেই বসে আছেন মাহবুবুর রহমান সাগর—চিরচেনা হাসি, আত্মবিশ্বাসী অভিব্যক্তি আর অন্তরের উচ্ছ্বাসে মুখর। চোখে চশমা আর হাতে একটি স্মার্টফোন, যেন ভালোবাসা আর সংগীতের মুহূর্তটি ধরে রাখার প্রস্তুতি।
এই জুটি শুধু সৌন্দর্যের নয়, শিল্প-সংবেদনেরও প্রতীক। একজন গানের ভুবনে আবিষ্ট, আরেকজন তাঁর পাশে এক নির্ভরতার নাম হয়ে বসে আছেন। তারা একসঙ্গে যেন একটি পরিপূর্ণ গল্পের মতো—ভালোবাসা, বন্ধন ও সৃষ্টিশীলতার।
তাদের নিয়ে আজ আমার কিছু কথা লিখতে ইচ্ছে করছে- তাই আমার কিছু কথা–জীবনে এমন একজন মানুষ পাশে থাকলে, মেয়েরা আর কাউকে নিজের আপন বলতে চায় না। বাবা-মা, ভাই-বোন—সব সম্পর্কই গুরুত্বপূর্ণ ঠিক, কিন্তু একটা সময়ের পর সেই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলো একটু একটু করে পেছনে সরে যায়। মেয়েটার চারপাশ ঘিরে থাকে তখন সমাজের চাপ, পারিবারিক চিন্তা, আর একরাশ অনিশ্চয়তা। সবাই ভাবে—”মেয়েটাকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দিই। সে যেন নিরাপদ থাকে।”
এই ‘নিরাপদ’ থাকার অর্থটাই যেন মাহাবুবরহমান সাগরের মধ্যে ধরা দেয়। তিনি শুধুই একজন স্বামী নন, বরং এক নিঃশব্দ ছায়া, যিনি ভাবীর চারপাশে একটা বৃত্ত তৈরি করে রাখেন—যেখানে ঠাঁই পায় ভালোবাসা, নির্ভরতা আর একরাশ অদৃশ্য যুদ্ধ।
ভাবী হয়তো অনেক সময় বলেন না কিছুই, চুপচাপ থাকেন। কিন্তু তার চুপচাপ থাকাটাও সাগর বোঝেন। তার ছোট ছোট চাওয়া, না বলা মনখারাপ, হঠাৎ করে নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া—সবকিছুই সাগরের চোখ এড়ায় না। অফিসে যাওয়ার আগে বাসার দরজায় একটু দাঁড়িয়ে ভাবীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বুঝতে চেষ্টা করেন—সব ঠিক আছে তো?
সাগরের নিজের শরীর ভালো না লাগলেও সকালে ঠিকই ঘুম থেকে উঠে পড়েন, রুটি-ডিমের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার আগেই রিকশায় চেপে অফিসে রওনা হন। কারণ তিনি জানেন, সংসারটা একা ভাবীর পক্ষে টেনে নেওয়া সম্ভব না, আর তিনি থাকতেই কেন ভাবী কষ্ট পাবেন?
বাজারের ব্যাগটা তিনি তুলে নেন নিঃশব্দে, বিলটা দেন কিছু না বলে। ভাবী হয়তো একটা নতুন ওড়না পছন্দ করেছেন—সাগর সেটাও মনে রাখেন। এমনকি রাতের খাবারে ভাবী কি পছন্দ করেন, কোনটার গন্ধে তার মাথা ধরে, সেগুলোও তার মুখস্থ।
এই সমাজে এমন স্বামী বেশি নেই। পুরুষদের বলা হয়—”তুমি কাঁদো না”, “তুমি তো মেয়ে না যে এত ভাবুক হবে”। অথচ এই সমাজ বোঝে না, একজন স্বামীও কাঁদে—শুধু চোখে নয়, মনে। শুধু গোপনে।
ভাবীর চোখের একটা হাসি, রাতের খাওয়ায় ভাবীর একটু প্রশংসা—এই কয়েকটাতেই সাগরের পৃথিবী রঙিন হয়ে ওঠে। তিনি চায় না, কেউ তাকে বাহবা দিক। শুধু ভাবীর মুখে প্রশান্তির রেখাটা থাকলেই তার লড়াইটা সার্থক মনে হয়।
সাগর এমন একজন মানুষ, যাকে দেখে বোঝা যায়—ভালোবাসা বললেই চিৎকার করে বলা কিছু নয়, বরং চুপচাপ হাতে হাত রাখার নাম ভালোবাসা। পাশে থাকার নাম ভালোবাসা। কঠিন সময়ে সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর নাম ভালোবাসা।
তাই যখন কেউ জিজ্ঞেস করে—”সবাই চলে গেলে কে থাকবে তোমার পাশে?”
ভাবী নির্ভর হয়ে বলেন—”আমার সাগর থাকবে।”
এটাই তো জীবনের আসল প্রাপ্তি। একজন স্বামী, যিনি শুধু ভালোবাসেন না—লড়েন। শুধু বলেন না—থাকেন। শুধু পাশে দাঁড়ান না—নিজেকে দেয়াল বানিয়ে রক্ষা করেন।
মাহাবুবরহমান সাগর, আপনি শুধু একজন মানুষ না—একটা বিশ্বাসের নাম, একজন নারীর নিশ্চিন্ত ঘুমের নাম, একজন স্ত্রীর সাহসের নাম। আপনাকে জানাই স্যালুট।