অস্ত্র, চোলাই মদ ও চাঁদাবাজির একক আধিপত্য: বোয়ালখালীর অপরাধ জগতের ভয়ঙ্কর নাম ওয়াসীম"
বোয়ালখালীর অপরাধজগতের অন্যতম ভয়ঙ্কর ও ক্ষমতাধর নাম হয়ে উঠেছে ওয়াসীম। বিগত সময় চোলাই মদের ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও, এখন সে পরিণত হয়েছে একটি সমন্বিত অপরাধ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রকে এখন চোলাই মদের ব্যবসা সম্প্রসারণ হয়েছে তাতে।
তার হাতে রয়েছে প্রচুর অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র—যেগুলো সে শুধু নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করে না, বরং ভাড়া দিয়ে থাকে পলাতক সন্ত্রাসী ও নদী-ডাকাতদের কাছে।
এই অস্ত্রগুলোর প্রকৃত মালিকদের তালিকায় রয়েছে বহু আলোচিত পলাতক সন্ত্রাসী সাদ্দাম মেম্বার ও রিংকু। এদের ব্যবহৃত অস্ত্র আজ ওয়াসীমের হেফাজতে। শুধু তাই নয়, তার জেঠা মোনাফ চেয়ারম্যানের সংগ্রহেও যেসব অস্ত্র ছিল, তা একসময় নির্বাচনী সহিংসতায় ব্যবহৃত হতো—সেসব অস্ত্রও বর্তমানে ওয়াসীমের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, শাশুড় জামাই নির্বাচনের সময় এইসব অস্ত্র সুমুখ যুদ্ধে সরাসরি ব্যবহৃত হয়েছিল।
কর্ণফুলী নদীতে চাঁদাবাজি এবং জলপথে অপরাধমূলক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ওয়াসীম তার অস্ত্রধারী বাহিনী নিয়ে সক্রিয়ভাবে ‘ডিউটি’ করে। বিশেষ করে সিরিয়া ফরেস্ট ঘাট ঘর থেকে চোলাই মদের বোঝাই বোট আসার সময় সে এবং তার সহযোগীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পাহারায় থাকে। তার নির্ধারিত মদের বোট ছাড়া অন্য কোনো বোট যদি চোলাই মদ বহন করে, তাহলে সেই বোট থামিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে চাঁদা আদায় করে। ওয়াসীমের মদের উৎসের জালও বিস্তৃত ও সুসংগঠিত। সিরিয়া ঘাঁট থেকে সে মদ সংগ্রহ করে সাহেরের ছেলে, জামাল, বাট্টো নুরুল আলম, ইসমাইল ও আলমগীরের মতো ব্যক্তিদের কাছ থেকে। এসব মদ একদিকে যেমন যায় শিখল বাহা ও জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যানের এলাকা হয়ে সূর্য আলী ও মুছার বাবার মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায়, অন্যদিকে এগুলো বোয়ালখালীর বিভিন্ন চায়ের দোকান, হাট-বাজার ও ঘাটে বিক্রি হয়। চোলাই মদ উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ‘বড়খোলা চাকমা পাড়া’—সেখানে একটি স্থায়ী কারখানায় চলছে দিনের পর দিন মদ তৈরির কাজ, প্রশাসনের চোখের সামনেই। ওয়াসীমের অপরাধমূলক অতীতও ভয়ংকর। ১৯৯৭ সালে সে কর্ণফুলী নদীতে জলদস্যু হিসেবে প্রকাশ্যে ডাকাতি করে সম্ভবত তাদের সাথে আব্দুল হাকিম নামে একজন ডাকাতের মৃত্যু হয়েছে নদীতে- সে সময় পুলিশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিট তাদের ডাকাত দলকে ধাওয়া করলে, ওয়াসীম কোনো ভাবে তীরে উঠে কধুরখীলে পালিয়ে যায়। স্থানীয় জনতা তাকে ধরে গণপিটুনি দেয় এবং তার মাথা ফেটে যায়। যদিও পুলিশ ওয়াসীমকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়, তারা ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছিল।
আজও সেই অস্ত্রসমূহের একটি বড় অংশ ওয়াসীমের হেফাজতেই রয়ে গেছে। সেগুলো ব্যবহার করে সে প্রতিনিয়ত অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানো, মদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, নদীপথে চাঁদাবাজি, এবং অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহ—সবকিছুই যেন একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ওয়াসীম।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূর্বে ওসি রাজ্জাক ও এসআই সাইফুল চেষ্টা করেছিলেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, কিন্তু ওয়াসীমের পেছনে থাকা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তা সম্ভব হয়নি। এখনো পর্যন্ত সে বহাল তবিয়তে বোয়ালখালীর একচ্ছত্র অপরাধপ্রতিভা হয়ে রয়েছে।
ওয়াসীমকে গ্রেফতার করে তার হেফাজতে থাকা অস্ত্র উদ্ধার না করা গেলে, শুধু বোয়ালখালিই নয়—চট্টগ্রামের একটি বড় অঞ্চল অপরাধের নিকষ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত অভিযানই পারে এই ভয়ংকর অপরাধীর দৌরাত্ম্য রোধ করতে। এর কোনো বিকল্প নেই।
প্রতিবেদকের মন্তব্য- ওয়াসীম! বোয়ালখালীর এক বিস্ময়কর প্রতিভা—যিনি হাওয়ার উপর দিয়ে হাঁটতে পারেন, তবে পেছনে রেখে যান চোলাই মদের গন্ধ, অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি আর কুখ্যাতির এক দীর্ঘ ছায়া। বলাই যায়, তিনি একজন লোকাল ‘অর্জুন’, যার তীরে বিষ নেই, তবে হাতে থাকে লাইসেন্সবিহীন রাইফেল, ওয়ান শুটার আর শর্টগানের সম্ভার—যেন বোয়ালখালীতে তারই একচেটিয়া অস্ত্র মেলা! তার সুরা সম্রাজ্যের উৎস রাঙুনিয়ার সিরিয়া ফরেস্ট ঘাট, সেখান থেকে আসে খাঁটি চোলাই মদ। নিয়ম মেনে চলে তার বাহিনী: নির্দিষ্ট বোট ছাড়া কেউ মদ আনলেই, ওয়াসীমের ছেলেরা অস্ত্র উঁচিয়ে ‘টোল’ তোলে। দিলেই শান্তি, না দিলে রইল নদী আর নাকের নিচে ঘুষির ঝুঁকি। ওয়াসীমের ইতিহাসও কম রোমাঞ্চকর নয়। ১৯৯৭ সালে কর্ণফুলী নদীতে ডাকাতির সময় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের তাড়া খেয়ে এমন দৌড় দেন যে বাতাসও তাকে ধরতে পারেনি। কধুরখীল গিয়েই আবার পড়েন জনগণের গণতান্ত্রিক মারধরের কবলে—মাথা ফেটে যায়, স্বপ্নও হয় এলোমেলো। যদিও পুলিশ তখন ধরতে পারেনি, উদ্ধার করে তার তিনটি প্রিয় অস্ত্র।
এখন সেই অস্ত্রগুলোই নাকি ঘুমায় তার বিছানার নিচে, তবে মাঝেমাঝে জেগে উঠে চিৎকার করে বলে—“চাঁদা কই?” এর মাধ্যমে চলে সিরিয়াল চাঁদাবাজি, অস্ত্র ভাড়া, আর নদীপথে আধিপত্য বিস্তার।
তার সাপ্লাই লাইনও বেশ গোছানো—জামাল, ইসমাইল, বাট্টো নুরুল আলম, আলমগীর—সবাই একেকজন ‘সাহসী ব্যবসায়ী’, যারা ওয়াসীমকে মদ সরবরাহ করে। সেই মদ বড়খোলার পাহাড়ি কারখানায় প্রক্রিয়াজাত হয়ে পৌঁছে যায় শহরের অলিতে-গলিতে, যেখানে ‘ওয়াসীম ব্র্যান্ড’ এখন পুরনো মদের মতো বিখ্যাত।
এতো কিছু চললেও প্রশাসনের অনেকেই চোখ বুজে থাকে, কারণ ওয়াসীম যেন ‘দেখে না এমন কিছু’, ‘ধরে না এমন কেউ’। তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই বদলি, আর প্রতিবাদ করলেই থানার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হয় অভিযোগ ছাড়াই।
বোয়ালখালীর ছেলেরা এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখে—“বড় হয়ে হবো ওয়াসীম! অস্ত্র হাতে, বোটের রাজা, আর মদের মহারাজ!”
এই স্বপ্ন যদি না ভাঙে, তাহলে বোয়ালখালী একদিন শুধু মানচিত্রেই থাকবে—বাস্তবে থাকবে অস্ত্রের আওয়াজ আর চোলাইয়ের গন্ধ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ শাহজালাল, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন,যুগ্ম-সম্পাদক :মো. কামাল উদ্দিন,
নির্বাহী সম্পাদক : রাবেয়া সিরাজী
বার্তা ও বাণিজ্য বিভাগ : মোতালেব ম্যানশন, ২ আর কে মিশন রোড, মতিঝিল, ঢাকা-১২০৩।
মোবাইল : 01796-777753,01711-057321
ই-মেইল : bhorerawajbd@gmail.com