“পুলিশের হাতে সাহিত্য
বিশ্ব গ্রন্থ দিবসে পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানার হাতে উপহার ‘নির্মম নিয়তি”‘
সাহিত্য শুধু কবি কিংবা লেখকের চৌহদ্দিতে সীমাবদ্ধ নয়—এটি ছড়িয়ে আছে প্রতিটি মনুষ্যহৃদয়ে। পুলিশের হৃদয়ে কি সাহিত্য নেই? নিশ্চয়ই আছে। তাদের পেশাদার দায়িত্বের চাপে হয়তো কখনও তা নিভৃতে থাকে, কিন্তু সেই হৃদয়ের গভীরে এক টুকরো কবিতার ছায়া, উপন্যাসের দীর্ঘশ্বাস কিংবা প্রবন্ধের প্রতিবাদী উচ্চারণ নিঃসন্দেহে বাস করে।
আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব গ্রন্থ দিবস। এমন একটি দিনে, যে দিনটি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের জন্ম ও মৃত্যুর দিন হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত, ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো এই দিনকে বিশ্ব গ্রন্থ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিনেই আমার লেখা প্রথম উপন্যাস নির্মম নিয়তি তুলে দিলাম পিবিআই-এর চট্টগ্রাম মহানগরের পুলিশ সুপার, নাইমা সুলতানার হাতে। এটি আমার লেখক জীবনের এক স্মরণীয় মুহূর্ত। নির্মম নিয়তি কোনো কাল্পনিক কাহিনি নয়। এটি এক নির্মম বাস্তবতার দলিল, যা এক নিরপরাধ শিশুর ওপর ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুরতার ভিত্তিতে রচিত। ঢাকার এক অভিজাত হোটেলে তাকে চোরের অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। আমি তখন ‘দৈনিক খবর’-এ ধারাবাহিকভাবে এই ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করি। সেই সত্য ঘটনাগুলোই সময়ের পরতে পরতে এক উপন্যাসের রূপ নেয়। এ যেন সংবাদ থেকে সাহিত্যে উত্তরণ—মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতার নীরব সাক্ষী।
এই উপন্যাস যখন আমার কম্পিউটার অপারেটর তনিমা টাইপ করতেন, তখন তিনি কেঁদে ফেলতেন। সাহিত্যের এই প্রগাঢ় শক্তি আজও আমাকে আন্দোলিত করে। আর সেই শক্তিকেই আজ সম্মান জানালাম এক সাহিত্যানুরাগী পুলিশ অফিসারকে এই উপন্যাসটি উৎসর্গ করে।
নাইমা সুলতানা—তিনি কেবল একজন দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা নন, বরং একজন মননশীল পাঠক, একজন সংবেদনশীল হৃদয়ের অধিকারিণী। তিনি লেখক ও সাংবাদিকদের সম্মান করেন, তাদের কাজকে মূল্য দেন। আমি যখন তাকে বলি, ‘নির্মম নিয়তি কোনো কল্পনার জন্ম নয়, এটি বাস্তব জীবনের নির্মমতা’, তখন তিনি গভীর মনোযোগে শুনছিলেন। তিনি জানতেন, পুলিশের ভূমিকাও এতে রয়েছে—ভালো যেমন আছে, তেমনি নিষ্ঠুরতার চিত্রও ফুটে উঠেছে। এর আগেও আমি তাকে আমার গবেষণাধর্মী বই সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কথা উপহার দিয়েছি, যা প্রকাশিত হয়েছে এবারের একুশে বইমেলায়। তবে আজকের উপহারটি ছিল ভিন্ন এক অনুভবের বহিঃপ্রকাশ। বিশ্ব সাহিত্যের এই বিশেষ দিনে সাহিত্যের অগ্নিশিখা হাতে তুলে দিলাম এক সাহসী, মানবিক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে।
বইয়ের প্রতি ভালোবাসা আমার জীবনের অন্যতম ভিত্তি। আমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিরিশ, অপেক্ষমাণ আরও কয়েকটি। আর প্রবন্ধের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে, ‘বাঁকা কথা’ দিয়ে। সেই থেকে লেখা, ভাবনা আর বাস্তবতার টানাপড়েনে একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছি, সাংবাদিকতা আর সাহিত্যের পারস্পরিক বাঁধনে জড়িয়েছি দেশ ও সমাজকে।
জীবনের সবচেয়ে আপন জিনিস দুটি—বউ আর বই। প্রতিটি মানুষের জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হলো বই বই বই। আর আজ, এই বই দিয়ে আমি শ্রদ্ধা জানালাম সেইসব পুলিশদের যারা সাহিত্যেরও সহযাত্রী। বিশ্ব গ্রন্থ দিবসে বই দিয়ে গড়া এক সেতুবন্ধন হলো—একজন লেখক আর একজন পুলিশ অফিসারের মাঝে। সেই সেতুর নাম নির্মম নিয়তি, আর সেই মননশীল পাঠকের নাম নাইমা সুলতানা।