1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
চোলাই মদ, অস্ত্র আর নদী ডাকাতির একক সম্রাট: বোয়ালখালীর অভিশাপ ওয়াসীম হাটহাজারী পৌরসদরে মাস্ক পরে দোকানে ডা’কাতি, সেনাবাহিনীর এক সদস্য গু’লি’বিদ্ধ কুমিল্লায় কিশোর গ্যাং চক্রের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিলো যৌথবাহিনী আটক ৯ লোহাগাড়ায় বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস উদযাপন :র‌্যালি, সমাবেশ ও প্রাণবন্ত আলোচনা সভা অসহায় নারীদের ছবি প্রকাশ মানবতা ও আইনের চরম লঙ্ঘন” অজুফা আকতার সাথী: সুরের জাদুকরী এক সন্ধ্যা ও পাহাড়ের নিবেদন বান্দর বনের বিবেকবান পথিক: কাজী মোঃ মজিবর রহমান নীলাচলের নীরবতা নীলের বাঁকে সবুজ গান — এক উন্মুক্ত জীবনের দিনে উদয় জ্যোতি বড়ুয়ার জন্মদিনে ত্রৈমাসিক অরুণোদয়ের মানবিক উদ্যোগ

অজুফা আকতার সাথী: সুরের জাদুকরী এক সন্ধ্যা ও পাহাড়ের নিবেদন

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে

বান্দরবনের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোলে, এক অপূর্ব বিকেল নামল। পাহাড়ে পাহাড়ে আলো-ছায়ার খেলা, নিঃসর্গে ভেসে বেড়ানো বাতাসের মৃদু শব্দ, আর সেই বাতাসেই হঠাৎ করে এক অদ্ভুত সুর ভেসে উঠল—যেন প্রকৃতি আপন সুরে সাড়া দিল। স্থানটি ছিল স্বরলিপি সংস্কৃতি অঙ্গনের বনভোজন অনুষ্ঠান। তবে তা ছিল শুধুমাত্র একটি আনন্দঘন ভ্রমণ নয়, ছিল যেন এক শিল্পানুভূতির পরিপূর্ণ সন্ধ্যা। আর সেই সন্ধ্যার কেন্দ্রে ছিলেন—অজুফা আকতার সাথী। এই নবীন শিল্পী আজ যেন সবার হৃদয়ে এক নতুন জোয়ার এনে দিলেন। চোখেমুখে ছিল লাজুক আত্মবিশ্বাস, কণ্ঠে ছিল এক অনন্য সৌন্দর্যের প্রকাশ। তিনি যখন মঞ্চে উঠে দাঁড়ালেন, তখনই চারপাশে এক স্নিগ্ধ নিরবতা নেমে এলো। উপস্থিত দর্শকরা যেন বুঝে গেল—আজ কিছু আলাদা ঘটতে যাচ্ছে। সাথী যেন সুরের জাদুকরী হাতে সময়কে থমকে দিলেন।অজুফা আকতার সাথী একজন মেধাবী শিক্ষার্থী, পড়াশোনার পাশাপাশি যিনি ক্ল্যাসিকাল সংগীতের কঠিন অনুশীলনে নিজেকে নিঃশব্দে গড়ে তুলছেন। তার কণ্ঠে যে কোমলতা, তা প্রকৃতি থেকেই নেওয়া—নির্মল, বিশুদ্ধ, প্রাণভরা। আধুনিক রুচির ছোঁয়ায় তার কণ্ঠে ফুটে ওঠে এমন এক আবেগ, যা শ্রোতাকে নিজের ভেতরের গভীরতায় নিয়ে যায়। সেদিন তিনি যখন কিংবদন্তি রুনা লায়লার গাওয়া এক কঠিন সংগীত পরিবেশন করলেন, তখন মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। সবাই যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সেই গান শুনে। কারও মুখে ছিল না কোনো শব্দ, চোখে ছিল বিস্ময় আর শ্রদ্ধার মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এমন সাবলীলভাবে, এমন প্রাণভরে গান গাওয়া, তা খুব কম শিল্পীর পক্ষেই সম্ভব। সাথীর কণ্ঠে ছিল তন্ময়তা, অনুভব, আর হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা এক স্পর্শকাতর ধ্বনি।এই সন্ধ্যার আসরটি ছিল কেবলমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে নয়, বরং এক শিল্পীকে আবিষ্কারের মুহূর্ত। আমি যখন তার গান শুনি, সেই মুহূর্তে অনুভব করলাম—এ এক ব্যতিক্রমী প্রতিভা। তার কণ্ঠের রঙে ছিল আলো, ছিল স্নিগ্ধতা, ছিল দরদ। মনে হচ্ছিল, নদীর কলকল শব্দ যেন সুর হয়ে বেজে উঠছে তার গলায়। এমন শিল্পীর জন্য গান না লিখে পারা যায়? গান শেষে যখন সে আমার কাছে এসে কিছু নতুন গান লেখার অনুরোধ করল, আমি এক মুহূর্তও দেরি করিনি। আমি বললাম, “সাথী, তোমার কণ্ঠে গান লেখা মানেই সময়ের জন্য কিছু রেখে যাওয়া।”সাথীর গানের মধ্যে রয়েছে সাহস আর আবেগের সম্মিলন। তিনি শুধু ক্ল্যাসিক বা আধুনিক গানেই দক্ষ নন, বরং লোকগান, দেশাত্মবোধক গান, এমনকি হারানো দিনের সেই চিরন্তন সুরেও তার কণ্ঠের জাদু সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তার উচ্চারণ স্পষ্ট, গায়কী নির্মল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দিকটি—সে গানকে আত্মস্থ করে নেয়, নিজের মধ্যে মিশিয়ে নেয়, তারপর তা শ্রোতাদের হৃদয়ে পৌঁছে দেয় নিখাদ ভালোবাসার সঙ্গে।
এই আয়োজনে তার গানের মধ্য দিয়ে এক ধরণের আত্মিক সংযোগ তৈরি হয় সবার সঙ্গে। শিল্পী ও শ্রোতা যেন এক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যায়। এই উপলক্ষ্যে সাথীর গানের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল পাহাড়ের নিঃসঙ্গতা, সূর্যাস্তের লাল রং, আর বনভোজনের নানান কোলাহল। সবাই গান শুনছিল, কিন্তু যেন কেউ আর কিছু ভাবছিল না—শুধু ডুবে ছিল সুরের মায়াজালে। অনেকেই হয়তো ভাবেন, শিল্পী হতে গেলে শুধুমাত্র গলা ভালো থাকলেই হয়। কিন্তু অজুফা আকতার সাথীর মতো শিল্পী প্রমাণ করে দিয়েছেন—একজন শিল্পী হতে গেলে চাই সাধনা, চাই ধৈর্য, আর চাই সৃষ্টিশীলতা। তিনি নিয়মিত সংগীত চর্চা করেন, গানের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন। এই আত্মবিশ্বাসই তাকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।
আজকের এই সন্ধ্যা শুধু একটি সংগীত সন্ধ্যা ছিল না, ছিল এক নবীন শিল্পীর আত্মপ্রকাশ, এক শিল্পীজন্মের সাক্ষ্য। অজুফা আকতার সাথীর মতো প্রতিভা প্রতিদিন আসে না। তার গানের মধ্যে যে আবেগ, যে প্রজ্ঞা—তা অনেক পরিণত শিল্পীর মধ্যেও দেখা যায় না।
আমি যখন ফিরে তাকালাম সেই সন্ধ্যার দিকে, মনে হলো, এই দৃশ্য আমার মনের মধ্যে চিরদিনের মতো গেঁথে থাকবে। সাথীর সেই মঞ্চে উঠে দাঁড়ানো, তার আত্মবিশ্বাসী হাসি, গানের প্রথম ধ্বনি, দর্শকদের স্তব্ধতা, এবং শেষে গানের শেষে হাততালির গর্জন—সব মিলিয়ে এক স্বপ্নময় দৃশ্য। আমি তখন মনে মনে ভাবছিলাম, বাংলা গানের ভুবনে এই তরুণী একদিন বড় আলো হয়ে উঠবে।
আমি তার জন্য কিছু গান লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, এবং সেই প্রতিশ্রুতি আমার কাছে কেবল একটি দায়িত্ব নয়, বরং তা এক আনন্দ, এক আবেগের বহিঃপ্রকাশ। তার জন্য লিখতে গিয়ে আমার নিজের সৃষ্টিশীলতাও যেন নতুন করে জেগে উঠেছে। আমি জানি, তার কণ্ঠ সেই লেখাগুলোকে নতুন প্রাণ দেবে।
আজকের সন্ধ্যা একটি ইতিহাস। যারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তারা এক সম্মিলিত স্বাক্ষর রেখে গেলেন একজন শিল্পীর যাত্রা শুরুর মুহূর্তে। এই লেখা সেই ইতিহাসের এক অনুচ্চারিত দলিল। আমি বিশ্বাস করি, অজুফা আকতার সাথীর নাম একদিন ছড়িয়ে পড়বে বাংলা সংগীতাঙ্গনের প্রতিটি কোণে। তার গানের মধ্যে যে প্রজ্ঞা, যে সরলতা, এবং যে মায়া—তা বহুদিন ধরে শ্রোতাদের হৃদয়ে রয়ে যাবে। এই সন্ধ্যার মতো আর কোনো সন্ধ্যা হবে না, কারণ এমন সুর, এমন অনুভব, এমন শিল্পী, এমন আবহ একত্রে আসা এক বিরল সৌভাগ্য। পাহাড়ের কোলে যে সুরের মায়ায় মোহিত হয়েছিল প্রকৃতি, তা আজও বাতাসে রয়ে গেছে, আর তার নাম—অজুফা আকতার সাথী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট