চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী লালদিঘী ময়দানে অনুষ্ঠিত ১১৬তম আবদুল জব্বারের বলী খেলার প্রথম রাউন্ডে জয় পেয়েছেন বরিশালের তসলিম বলী। ২০১৪ সাল থেকে বরিশাল বিভাগের একমাত্র প্রতিযোগী হিসেবে নিয়মিতভাবে এই বলী খেলায় অংশগ্রহণ করছেন তিনি। তসলিম বলী জানান, “বরিশাল নদীমাতৃক এলাকা, আমাদের প্রিয় খেলা হাডুডু। বলী খেলা আমাদের অঞ্চলে তেমন পরিচিত নয়। ২০১৪ সালে জাহাজের চিফ অফিসার থাকা অবস্থায় মেলায় ঘুরতে এসে মজার ছলে রেজিস্ট্রেশন করি। সেখান থেকেই শুরু বলী খেলার প্রতি ভালোবাসা।”
চট্টগ্রামের বিখ্যাত এই বলী খেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটি দেশের সবচেয়ে স্বীকৃত বলী প্রতিযোগিতা। এখানে সারা দেশ থেকে কৃতিত্ব অর্জনকারী বলীরা বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। আমি তসলিম বলী, বরিশালের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি টানা ছয় বছর ধরে। হয়তো আরও কেউ অংশ নিয়েছেন, তবে আমার জানা নেই।”নিজের খেলাধুলার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তসলিম জানান, “বরিশালে থাকতে হাডুডুসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়েছি। বিশেষ করে অ্যাথলেটিক্স, বর্শা নিক্ষেপ, চাকতি নিক্ষেপ, লৌহ গোলক খেলায় থানা ও জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি বহুবার। তাই ভাবলাম, জব্বারের বলী খেলাও একবার খেলে দেখা যাক। সেই পাগলামি থেকেই আজকের এই পথচলা।”উল্লেখ্য, বলী খেলা একটি বিশেষ ধরনের কুস্তি প্রতিযোগিতা, যা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় পরিচিত ‘বলী খেলা’ নামে। প্রতিবছর ১২ বৈশাখ চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিযোগিতা। ১৯০৯ সালে বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই খেলার সূচনা করেন ব্রিটিশবিরোধী চেতনা গড়ে তুলতে। ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।জব্বারের বলী খেলা শুধু কুস্তি প্রতিযোগিতা নয়, এটি বৃহত্তর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বৈশাখী মেলাও। লালদিঘী মাঠ ঘিরে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসে বৈশাখী মেলা। এবারের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার বাঘা শরীফ।তসলিম বলীর মতে, “আমার অংশগ্রহণ কোনো পেশাগত কারণে নয়, এটা একান্তই আনন্দের ও ভালোবাসার জায়গা থেকে। বলী খেলায় অংশ নিয়ে নিজের স্বপ্ন ও সাহসিকতা প্রকাশ করতে পারছি, সেটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”চট্টগ্রামের মাটিতে বরিশালের প্রতিনিধি হিসেবে বলী খেলায় তসলিম বলীর এই অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।