1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
চলন্ত বাসে ১৪ বছরের কিশোরীর গণধর্ষণ: একটি জাতির লজ্জার ইতিহাস পাহাড়ের নীরবতায় শব্দের জন্ম আশাশুনিতে ওয়াজেদ ফকির সরকারি খাস জমি নিজের নামে নিয়ে বিক্রি করায় এলাকা বাসীর ক্ষোভ! মুজিবনগর সরকার: স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা-লিপি তেকোটা প্রতিভার আয়োজনে বর্ষবরণ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য মঙ্গলশোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত নাছিম: সত্যের পথের এক নিবেদিত সংগ্রামী সিটিজি প্রপার্টি স্পোর্টস একাডেমি আয়োজিত ফুটসাল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নের জন্য ৩৫,০০০ টাকা পুরস্কার! ওসি মোঃ আফতাব উদ্দিনের দক্ষ নেতৃত্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার বেঈমানের ভিড়ে একলা সত্যের যোদ্ধা: আমি নাছিম সাদিয়ার আম্মু এবং এক অচেনা হৃদয়দ্বার

গল্পে গল্পে জীবন কথাঃ শামীমা আখতার শিখার অমূল্য যাত্রা

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫
  • ৪৫ বার পড়া হয়েছে

গল্পে গল্পে জীবন কথাঃ
“শামীমা আখতার শিখার অমূল্য যাত্রা”

শামীমা আখতার শিখা ছিল এক স্বপ্নীল মেয়ে, যাঁর চোখে সারা পৃথিবী ছিল একটি বিশাল বই, আর তার মনের গভীরে ছিল অগণিত স্বপ্নের পৃষ্ঠা। ছোটবেলায় যখন তার সহপাঠীরা খেলা বা বিনোদনে সময় কাটাত, তখন সে একটি নিরিবিলি কোণে বসে থাকত তার প্রিয় বইয়ের সাথে। তার জন্য বই ছিল শুধু একটি পত্রপাঠ নয়, বরং জীবনদর্শন, আত্মবিশ্বাস, ভালোবাসা এবং শক্তির উৎস। সে কখনোই বুঝতে পারেনি, তার এই বইয়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসা তার জীবনকে এক অনন্য পথের দিকে পরিচালিত করবে।
শিখা ছিল এক শান্ত প্রকৃতির মেয়ে, যাঁর মন ছিল গভীর এবং হৃদয় ছিল বিশাল। একদিন বিকেলে, যখন সূর্য তার শেষ আলোকরশ্মি ছড়াচ্ছিল আকাশে, শিখা তার বাড়ির কাছে এক পুরনো লাইব্রেরিতে প্রবেশ করল। লাইব্রেরিটি ছোট হলেও এখানে ছিল অসংখ্য পুরনো বই, বইয়ের গন্ধ এবং একটি অদ্ভুত নস্টালজিক অনুভূতি। সারা পৃথিবী বদলালেও, এই লাইব্রেরি ছিল একটুকু সময়ের মতো, যা কখনোই পুরনো হতো না। এখানে প্রতিটি বই ছিল একেকটি অমূল্য রত্ন, এবং শিখা জানত, এখানে কোনো একটি বই তার জীবন বদলে দিতে পারে।
বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অমিত। প্রতিটি বই তাকে নতুন কিছু শিখাত, তার চিন্তাধারাকে পরিশুদ্ধ করত এবং তাকে নতুন এক দিগন্তের সন্ধান দিত। সেই দিন, শিখা হাতে একটি বই তুলে নিল। বইটির নাম ছিল “জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পথে”। পৃষ্ঠাগুলি ছিল একটু সেঁতলে, কিন্তু বইয়ের প্রতিটি শব্দে যেন এক আলোর ঝিলিক ছিল। শিখা জানত, এটি তার জন্য একটি অমূল্য সন্ধান হতে চলেছে। এটি ছিল একটি বই, যা শুধু জ্ঞানের পথ দেখাবে না, বরং তাকে নিজের আত্মার গভীরে নিয়ে যাবে।
তারপর, সে বইটি কিনে বাড়ি ফিরে এল। তার কাছে তখন ছিল শুধুমাত্র কিছু টাকা, কিন্তু সে মোটেই চিন্তিত ছিল না। সে জানত, টাকা কখনোই জীবনের অমূল্য উপহারগুলো মাপার একমাত্র উপায় হতে পারে না। সে নিশ্চিন্ত ছিল যে, বইটি তাকে জীবনের একটি নতুন দিগন্ত দেখাবে এবং তার সত্ত্বাকে এক অনবদ্য পর্যায়ে পৌঁছাবে।
বিকেলের আলো কমতে থাকলেও, শিখা রাতের অন্ধকারে বসে বইটি পড়তে শুরু করল। প্রতিটি শব্দ যেন তার মনের ভেতর একটি নতুন পৃথিবী খুলে দিল। শিখা অনুভব করল, এই বই তার জীবনকে আরো সমৃদ্ধ, সৃজনশীল ও শক্তিশালী করে তুলছে। বইটি তাকে শিক্ষা দিল, কিভাবে জীবনকে এক সাহসী, সুন্দর ও অনন্য পথে চালিত করা যায়।
এই সময়, শিখার মনে একটি চিন্তা এসে হাজির হল। সে ভাবল, “কী হবে যদি আমি এই জ্ঞানকে অন্যদেরও শেয়ার করতে পারি?” তার মনে হয়েছিল, বই তার জীবনের এক অমূল্য বন্ধু, আর যদি আরো মানুষ বুঝতে পারে যে, বই শুধু একটি অক্ষরমালা নয়, এটি একটি দরকারি, সাহসী যাত্রা, তবে তাদের জীবন বদলে যাবে। তখনই তার মাথায় একটি আইডিয়া এলো—সে একটি বইমেলা আয়োজন করবে, যেখানে শুধু বই নয়, মানুষের জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি, আশা, সাহস এবং স্বপ্নের বিষয়েও আলোচনা হবে।
শিখা পরিকল্পনা শুরু করল। সে নিজের সমস্ত অর্থনৈতিক সামর্থ্য দিয়ে একটি ছোট বইমেলা আয়োজন করার প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। মেলার উদ্দেশ্য ছিল বইয়ের গুণাগুণ সম্পর্কে মানুষকে জানানো, তাদের বোঝানো যে বই কেবল তথ্য প্রদান করে না, এটি একটি জীবনদর্শন, একটি সম্পর্ক এবং একটি আত্মবিশ্বাসের সঞ্চালক।
বইমেলা শুরু হলো এক উজ্জ্বল সকালে। শিখা সমস্ত প্রস্তুতি নিয়ে লাইব্রেরির সাথেই একটি ছোট স্থান ভাড়া করেছিল, যেখানে অনেক ধরনের বই এবং লেখক উপস্থিত ছিলেন। মেলার প্রথম দিনটি ছিল অত্যন্ত সফল। হাজারো মানুষ এসে উপস্থিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল ছাত্র-ছাত্রী, লেখক, পাঠক, বইপ্রেমী এবং সাধারণ মানুষ। শিখা প্রতিটি বইয়ের গল্প শোনাচ্ছিল, তাদের গুণাবলী ব্যাখ্যা করছিল এবং বইয়ের প্রতি ভালোবাসার গূঢ় অর্থ বোঝানোর চেষ্টা করছিল।
শিখা অনুভব করল, বই যে শুধু তার একক সম্পদ নয়, এটি ছিল সকল মানুষের জন্য একটি অমূল্য উপহার। প্রতিটি বইয়ের পৃষ্ঠা যেন তাদের জীবনের নতুন দিক উন্মোচন করছিল। বইমেলার মধ্যে এক মুহূর্তে, শিখা অনুভব করল, সে এখন জীবনের এক নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার ভালোবাসা, তার ইচ্ছাশক্তি, এবং তার জ্ঞান সকলকে একত্রিত করেছে। এটি শুধু তার নিজের স্বপ্ন ছিল না, বরং সকলের স্বপ্নের সিঁড়ি তৈরি করেছে। বইমেলার মধ্যে যখন তার সহপাঠী এবং অন্যান্য লেখকরা এসেছিল, তাদের মধ্যে একজন ছিল রাশেদ। রাশেদ ছিল একজন যুবক, যাঁর বইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল সীমাহীন। কিন্তু সে জীবনের নানা পরিস্থিতির কারণে বই কেনার সাহস পায়নি। কিন্তু শিখার আন্তরিকতায় সে তার শেষ কিছু টাকা খরচ করে একটি বই কিনল এবং শিখার সঙ্গী হয়ে সেই বইটির আলোচনা করতে শুরু করল। শিখা ও রাশেদ একে অপরের সাথে বইয়ের গল্প শেয়ার করতে করতে এক নতুন বন্ধুত্ব তৈরি করল। তাদের কথোপকথনে বইয়ের আলোচনা কখনো থামত না। রাশেদ বুঝতে পারল, শিখার মতো একটি বইপ্রেমী মানুষের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত তার জীবনে এক নতুন আলোর মতো। শিখার চিন্তা, তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার সাহস তাকে এক নতুন জগতে প্রবেশ করতে সাহায্য করল।
একদিন, শিখা যখন রাশেদের সাথে বইয়ের উপর আলাপ করছিল, তখন রাশেদ হেসে বলল, “তুমি জানো, শিখা, তুমি যখনই বইয়ের কথা বলো, মনে হয় যেন তুমি শুধুমাত্র বইয়ের কথা বলছো না, তুমি আমাদের মন ও আত্মাকে জাগিয়ে তুলছো।” শিখার চোখে এক নিঃশব্দ হাসি ফুটে উঠল। সে জানত, তার জীবন শুধু বইয়ের জন্য নয়, বরং তার আশেপাশের মানুষদের জন্যও বিশেষ কিছু হয়ে উঠেছে। এভাবেই শিখার জীবন এক নতুন রূপ নিয়েছিল। সে বুঝেছিল, বই শুধু তার একমাত্র সহায় নয়, এটি ছিল তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তাকে শক্তি দেওয়ার উৎস। রাশেদের মতো আরো অনেকেই তার কাছে এসে জেনেছিল, বই তাদের জীবনের এক অমূল্য বন্ধু হতে পারে, যা তাদের দুঃখ, হতাশা, এবং সংকটের মধ্যেও আলোর পথ দেখায়।
শামীমা আখতার শিখার গল্প একটি গল্প ছিল জ্ঞানের, সাহসের, ভালোবাসার এবং গভীর আত্মবিশ্বাসের। শিখা জানত, জীবনে যদি কখনো কিছু হারানোও হয়, তবে বই হারানো যায় না। বই তার জীবনের সঙ্গী, তার পথপ্রদর্শক এবং তার অমূল্য রত্ন হয়ে থাকবে।
এই গল্প শিখার জীবনযাত্রা, তার বইপ্রেম এবং তার অমূল্য জীবনদর্শনের একটি প্রতীক হয়ে রয়ে গেল, যা আজও বহু মানুষের হৃদয়ে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা সঞ্চারিত করে চলেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট