1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০৫ অপরাহ্ন

বাটা ইসরায়েলি পণ্য নয়: মিথ্যাচারের জবাবে সত্যের জয় হোক!

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

সম্প্রতি ফেসবুকে এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে একটি দাবি ঘুরে বেড়াচ্ছে—বহুজাতিক জুতা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বাটা নাকি ইসরায়েলের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান, তাই একে বয়কট করা উচিত। এই দাবি অনেকের আবেগকে নাড়িয়ে দিলেও, বাস্তবতা হলো—এটি একটি পুরোপুরি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন প্রচার।
বাটা: ইতিহাস ও শিকড়ের সন্ধানে-
বাটা কোম্পানির যাত্রা শুরু হয় ১৮৯৪ সালে, য্লিন নামক একটি ছোট শহরে, যা তখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল এবং বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্রের অংশ। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা টোমাস বাটা ছিলেন একজন খাঁটি চেক নাগরিক। তাঁর পরিবার ক্ষুদ্র পরিসরে চামড়াজাত জুতা তৈরির কাজ করত। টোমাস মাত্র ছয় বছর বয়সেই বাবার কাছ থেকে জুতা তৈরির হাতেখড়ি নেন এবং ১২ বছর বয়সে ব্যবসার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন।
১৮ বছর বয়সে তিনি নিজেই একটি ছোট কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে বিশাল বহুজাতিক শিল্পে পরিণত হয়। তাঁর জীবন ছিল উদ্যম, নিষ্ঠা এবং উদ্ভাবনের এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর মা ছিলেন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী এবং ছোটবেলায় তিনি বাইবেলের আয়াত পর্যন্ত মুখস্থ করেছিলেন। বর্তমান কাঠামো ও অবস্থান-
টোমাস বাটার মৃত্যুর পরও কোম্পানিটি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে বাটার বৈশ্বিক প্রধান কার্যালয় সুইজারল্যান্ডের লুসার্ন শহরে অবস্থিত। কোম্পানিটি ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশ্বের ২৯টি দেশে বাটার অফিস ও উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে।
গুজবের সূত্র ও ফ্যাক্টচেকিং-
২০২৩ সালে ফেসবুকে একটি তালিকা ভাইরাল হয় যেখানে বলা হয়—১৫টি পণ্য ইসরায়েলি মালিকানাধীন, যার মধ্যে বাটার নামও ছিল। তবে এই দাবির কোনো নির্ভরযোগ্য উৎস ছিল না। ফ্যাক্টওয়াচ, বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম, তাদের অনুসন্ধানে প্রমাণ করে যে, এই দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়, বাটার কোনো মালিকানা বা কার্যক্রমের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা নেই। বাটার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, নিউইয়র্ক টাইমসের সংরক্ষিত প্রতিবেদন, এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্র ঘেঁটে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে—এই প্রতিষ্ঠান একটি ইউরোপীয়, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, যার মূল ভিত্তি শ্রম, প্রযুক্তি ও সেবা। মিথ্যা প্রচারণার ভয়াবহতা- একটি প্রতিষ্ঠানের নাম মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইসরায়েলি সম্পৃক্ততার আওতায় এনে সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বান দেওয়া কেবল একটি ব্যবসার ক্ষতিই নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে জনসচেতনতার অভাব, ভুল তথ্য বিশ্লেষণের দুর্বলতা এবং অপ্রতুল তথ্যভাণ্ডার। এই ধরনের গুজবের প্রভাব শুধু কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়ে না, বরং সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, জনমনে ভুল বার্তা প্রেরণ করে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের করণীয়- যেকোনো ভাইরাল দাবি যাচাই-বাছাই ছাড়া বিশ্বাস করা বা প্রচার করা একজন সচেতন নাগরিকের জন্য অনুচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো প্রতিটি তথ্যের পেছনে সত্য আছে কিনা তা যাচাই করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমরা যদি সত্যকে অবজ্ঞা করি এবং আবেগ দিয়ে মিথ্যাকে জায়গা দিই, তবে সেটি কেবল জাতির মেধা ও বিবেচনার অবমূল্যায়নই নয়, বরং তা আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। বাটা ইসরায়েলের পণ্য নয়—এটি একটি নিশ্চিত, তথ্যভিত্তিক এবং প্রমাণিত সত্য। যারা এই গুজব ছড়িয়েছেন বা বিশ্বাস করেছেন, তাদের এখনই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সত্যের আলোয় মিথ্যার অন্ধকার দূর হোক। গুজব নয়, জাগুক বিবেক—সত্যের পক্ষেই থাকুক আমাদের অবস্থান।
নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতিমালা অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট