চট্টগ্রামে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের দাবিতে আজ দুপুরে এক জরুরি সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য এডভোকেট এ.এস.এম. বদরুল আনোয়ারের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এ সম্মেলনে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার সংগঠক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক এজিএস ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কাশেম কামাল, চট্টগ্রাম আইন কলেজের উপাধ্যক্ষ ও প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট বদরুল হুদা মামুন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, এবং চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি কাজী মনসুর প্রমুখ। বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি হলো নিজ শহরেই হাইকোর্টের বিচারিক কার্যক্রম চালু করা। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। বক্তারা মনে করেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এ সময় বক্তারা বিচার বিভাগের সংকট চিত্র তুলে ধরেন। তারা বলেন, “প্রায় ২০ কোটি মানুষের এই দেশে মাত্র ২০০০ জন বিচারক রয়েছেন, যা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য একেবারেই অপ্রতুল। চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের ঢাকায় গিয়ে বিচার প্রাপ্তির জন্য লড়াই করতে হয়, যা সময়, অর্থ এবং শারীরিক পরিশ্রমের দিক থেকে অত্যন্ত কষ্টকর।” বক্তারা আরও বলেন, ১৯৮৬ সালে সংবিধানের ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা পরে বাতিল করে কার্যক্রম পুনরায় ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। বর্তমানে সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অনুমোদন এবং প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তে ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব, তাই আইনগত ভিত্তিতে চট্টগ্রামে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনে কোনো বাধা নেই।
চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তারা বলেন, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর অঞ্চল হিসেবে চট্টগ্রামের জনগণের দ্রুত ও সহজ প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই দাবির পক্ষে তারা সাংবিধানিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক দিক তুলে ধরেন।
সম্মেলন থেকে তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়: ১. তীব্র জনমত গড়ে তোলা এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ। ২. চট্টগ্রাম বন্দরের এডমিরালটি জুরিসডিকশনের আওতায় হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জোর দাবি।
৩. প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রুত এই দাবির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এই আন্দোলনে কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। দেশের জনগণের ন্যায্য বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করাই এই দাবির মূল উদ্দেশ্য। মানবাধিকার সংগঠন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি একযোগে এই দাবির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার করেন। সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে সভাপতির বক্তব্যের মাধ্যমে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।